মহামারী করোনায় সারা বিশ্বের মতো ওমানেও ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে। করোনার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে সব! করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা মহামারী করোনার তাণ্ডব। একের পর এক বাড়ানো হচ্ছে লকডাউনের সময় সীমা।
সর্বগ্রাসী করোনায় অন্যান্য দেশের মতোই সব কিছু বন্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। এতে একদিকে যেমন চরম খাদ্যসংকট, অন্যদিকে অর্থনৈতিক মন্দায় ছাঁটাই আতঙ্কে দুর্বিসহ জীবন পার করছেন সেখানে বসাবসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। হাতে কাজ নেই, ঘরে নেই খাবার। যেখানে থাকতেন, সেখানেও মিলছে না মাথা গোঁজার ঠাঁই। এভাবেই সীমাহীন ভোগান্তি নিয়ে শুয়ে-বসে দিন কাটছে ওমানে বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের।
তাদের অভিযোগ, এই দুর্দিনে তাদের পাশে নেই বাংলাদেশ দূতাবাস। তেলনির্ভর অর্থনীতির দেশটিতে জীবিকার তাগিদে বসবাস করেন প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশি। এর মধ্যে অবৈধ আছেন অসংখ্য প্রবাসী। কাজ না থাকায় সবচেয়ে বেশী খাদ্যসংকটে পড়েছেন এইসব শ্রমিকরা। তাদের বেশিরভাগই দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন।
করোনার প্রাদুর্ভাবে শুক্রবার (৮-মে) পর্যন্ত ওমানে মারা গেছেন ১৬ জন। মোট আক্রান্ত ৩১১২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১০২৫জন। শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ করোনা আক্রান্তদের তথ্য প্রকাশ করলেও ওমান সরকার অবশ্য আক্রান্ত বা মৃত কারোই পরিচয় প্রকাশ করে না। তবে বৈধ-অবৈধ যে-ই আক্রান্ত হোক না কেন, ওমান সবার চিকিৎসা বিনামূল্যে করার ব্যবস্থা করেছে। ঠিক কতজন প্রবাসী বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তা জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, সংখ্যাটা এক হাজারের বেশী হবে। ওমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে দেশটির আক্রান্ত অধিকাংশই প্রবাসী। যেহেতু ওমানে বসবাসের দিকে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশী প্রবাসী। সুতরাং দেশটির কমিউনিটির নেতারা বলছেন, বাংলাদেশী প্রবাসী আক্রান্ত হাজারের বেশী হবে।
[the_ad id=”652″]
করোনা মোকাবিলায় ওমান শুরু থেকেই কঠোর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। আক্রান্তের দিকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের তূলনায় অনেক ভালো অবস্থানে ওমান। দীর্ঘদিন যাবত লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে সব বড় প্রকল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজ। এদিকে তেলের দাম স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে আর্থিক মন্দা। এর ফলে কর্মী ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানই। করোনা-পরবর্তীতে তাই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিকে দেশে ফিরতে হতে পারে। কর্মহীনদের মধ্যে এখন সেই আতঙ্ক।
এদিকে এ বিষয়ে ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওভাবে চাপ নেই। তবে আশঙ্কা করছি করোনা-পরবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলো ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই করবে, যেটি অত্যন্ত চিন্তার। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি কর্মী ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। আমরা করোনার কারণ দেখিয়ে নিবৃত করেছি। সে সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি, যেন করোনা-পরবর্তীতেও আমাদের শ্রমিক ভাইদের বহাল রাখা হয়।’
আরও পড়ুনঃ ওমানে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলে ৫০০ রিয়াল জরিমানা
কমিউনিটি সূত্র বলছে, প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম বলে অভিযোগ। তবে এব্যাপারে রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সরওয়ার জানান, দূতাবাসের পক্ষ থেকে ৪ হাজার জনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও ৭ হাজার বাংলাদেশিকে সহায়তা দেওয়া হবে। রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘ওমানে শ্রমিক বেশি। লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ থাকায় অনেকেই খাদ্যসংকটে পড়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো সহায়তা করার। তবে চাহিদা অনেক।’ তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে অবশ্য একটু বিলম্ব হচ্ছে। বিভিন্ন শহরে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে অসহায় বাংলাদেশিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে।’
আরও পড়ুনঃ ওমানের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের কঠোর হুঁশিয়ারি
ওমানের এক কমিউনিটি নেতা প্রবাস টাইমকে বলেন, ওমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্মী ছাটাই করবে এটা ঠিক, তবে এর প্রভাব বাংলাদেশীদের উপর তেমন একটা পরবেনা। তিনি বলেন, ওমানে সাধারণত কিছু সেক্টর আছে, যেমন: কৃষি, কনস্ট্রাকসন, ক্লিনিং ও সেলুন সহ এমন কিছু কাজ আছে যা ওমান সরকার আপাতত ওমানি করন করবেনা। দেশটির ওমানি করন করবে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, শিক্ষক সহ এই ধরনের কিছু পেশায়, আর আমাদের বাংলাদেশী প্রবাসী এইসব পেশায় খুবই কম রয়েছেন। সুতরাং ওমান সরকার ওমানি করন করলেও এর প্রভাব তেমন একটা বাংলাদেশীদের উপর পরবেনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
https://www.youtube.com/watch?v=_C6JICciFPM
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
