মধ্যপ্রাচ্যে যেতে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম গত কয়েক মাসে অস্বাভাবিক বেড়েছে। এর পেছনে সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন প্রবাসীরা। একটি ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। সিন্ডিকেট করে এসব টিকিট দখল করে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
ঢাকা থেকে ২২ ঘণ্টা দূরত্বের নিউইয়র্কে আসা-যাওয়ার জন্য উড়োজাহাজের টিকিট পাওয়া যায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায়, আর ঢাকা থেকে মাত্র ৫ ঘণ্টা দূরত্বের ওমানে শুধু যাওয়ার জন্যই গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। প্রবাসীদের ঠিকানা হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে কয়েক গুণ খরচ বেড়ে গেছে কর্মীদের। অথচ একই গন্তব্যে প্রতিবেশী দেশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান থেকে অর্ধেকের কম দামে মিলছে টিকিট।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে আগামী ৬ মে ঢাকা থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদগামী সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে ৮০ হাজার টাকায়, আর বাংলাদেশ বিমানে ওই দিনের টিকিট নেই। তবে আগের বা পরের দিনের টিকিট নিলে গুনতে হবে ১ লাখ ২ হাজার টাকা।
অপরদিকে প্রতিবেশী তিনটি দেশ থেকে সৌদি আরবের রিয়াদে যাওয়ার টিকিট খোঁজা হয় অনলাইনে। এতে দেখা যায়, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকে রিয়াদে যেতে এমিরেটসের টিকিট আছে ২৪ হাজার ৯৪১ টাকায়। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে রিয়াদে যেতে ৩২ হাজার ৪৯১ টাকায় টিকিট দিচ্ছে ফ্লাই দুবাই। আর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে রিয়াদের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে ২৭ হাজার ৬৫৬ টাকায়, ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজে।
সৌদি আরবের রিয়াদ যেতে টিকিট মূল্য ইসলামাবাদ থেকে ২৫ হাজার টাকা; কাঠমান্ডু থেকে ২৮ হাজার টাকা; কলম্বো থেকে ৩২ হাজার টাকা; ঢাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা। তবে শুধু রিয়াদ নয়, সৌদির দাম্মাম বা জেদ্দায় যেতে হলেও ৭৫ হাজারের নিচে টিকিট মিলছে না। আরব আমিরাত, ওমান, কাতারে যেতেও চড়া দামে টিকিট করতে হচ্ছে প্রবাসীদের।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী গণমাধ্যমকে বলেন, সৌদি আরব এক বছর ধরে নিয়মিত ফ্লাইটের অনুমোদন দেয় না। বিশেষ ফ্লাইটের খরচ অনেক বেশি। সব মিলে উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলো এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। তবু ভাড়া না বাড়াতে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, চেষ্টা চলছে।
প্রবাসীরা বলছেন, কয়েক বছর আগেও ওমান যেতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় টিকিট পাওয়া যেত। দুই বছর আগে এটি বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার হয়, আর করোনায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে আবার চালু হলে টিকিটের দাম ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর এখন ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার বেশি দিয়েও কেউ কেউ কিনছে টিকিট।
টিকিটের দাম কমাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে দুদিন আগে বিমান মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করতে যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি টাকা লাগছে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে। টিকিট সরবরাহকারীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (আটাব)–এর সাধারণ সম্পাদক মাযজারুল এইচ ভূইয়া বলেন, সৌদি যেতে ২৫ হাজার টাকার টিকিট এখন ৮০ থেকে ৯০ হাজারের কমে পাওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দাম কমেছে, যাত্রীও কম যাচ্ছে না। তবু এত ভাড়া, এটি কোনো দেশে নেই।
ঢাকা থেকে ২২ ঘণ্টা দূরত্বের নিউইয়র্কে রিটার্ন টিকিট ৬৫ হাজার টাকা। অথচ ৪ ঘণ্টা দূরত্বের দুবাইয়ে ওয়ানওয়ে টিকিট ৭০ হাজার টাকা। সিন্ডিকেটের অভিযোগ করেছেন আটাবের সদস্যরাও। তাঁরা বলেন, বিমান রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা। কিন্তু বেসরকারির চেয়ে তাদের টিকিটের দাম বেশি। তবু টিকিট পাওয়া খুব কঠিন। একটি ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সিন্ডিকেট করে এসব টিকিট দখল করে রাখা হয় চড়া দামে বিক্রি করতে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
