অসহযোগিতাসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে মাস্কাটের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। প্রবাসীরা জানাচ্ছেন, দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় বিভিন্ন সেবায় দীর্ঘসূত্রিতাসহ দূতাবাসে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। এমনকি সময়মত কাজ করে না দেওয়ায় সালালাহর মতো দূরবর্তী শহর থেকে আসা প্রবাসীদের দূতাবাসের নিকটবর্তী রাস্তাঘাটে শুয়ে বসেই রাত কাটাতে হচ্ছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে এই প্রতিবেদক ওমানে থাকা সূত্রের মাধ্যমে দূতাবাস ও এর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্পটের একাধিক ভিডিও চিত্র সংগ্রহ করেছেন। সেসব ভিডিওতে দূতাবাসের কাছেই কয়েকজন প্রবাসীকে ভবঘুরেদের মত অসহায় হয়েই অবস্থান করতে দেখা গেছে। আলাপ করতে গেলে তাঁদের সকলেই জানিয়েছেন, রাত্রিযাপনে একটি থাকার জায়গা চেয়ে দূতাবাস কর্মকর্তাদের সহায়তা চেয়েও তারা সহযোগিতা পাননি। সংখ্যায় তারা একশো জনেরও বেশি।

“সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হটাৎ কর্মকর্তা বলে উঠলেন, আজকে আর কাজ হইবোনা। কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ সিরিয়ালে আমি ছিলাম ১৬ জনের পরেই। আর কয়েকধাপে নিয়ে নিলেই কিন্তু আমাদের কাজ শেষ হইতো।” বলছিলেন মাস্কাটের কয়েকশ’ কিলোমিটার দূর থেকে পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা একজন প্রবাসী শ্রমিক। যাতায়াত সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল বলে তিনি দূতাবাসের কাছেই বেঞ্চে বসে রাত কাটাচ্ছিলেন।

বিদিয়া শহর থেকে আসা এক বৃদ্ধ প্রবাসী অভিযোগ করে বলেন, পাসপোর্টের জন্য শুধু ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়াটাই বাকি ছিলো। কিন্তু কর্মকর্তারা মেশিন নষ্টের দোহাই দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। রাত কী এভাবেই চেয়ারে বসে কাটাবেন- প্রশ্ন করলে ষাটোর্ধ্ব এই প্রবাসীর উত্তর “আমরা আর কি করুম!” সালালাহ থেকে আসা আরেক প্রবাসী যুবক জানালেন, দূতাবাস থেকে আবার তার শহরে গিয়ে পরেরদিন যথাসময়ে ফিরে আসা সম্ভব নয়। কারণ মাস্কাট থেকে সালালাহর দূরত্ব প্রায় ১২শ’ কিলোমিটার। যেহেতু কাজ সম্পন্ন হয়নি তাই রাতে থাকার মত একটি জায়গা চেয়েছিলেন কর্মাকর্তাদের কাছে। কিন্তু “কোনো ব্যবস্থা নেই” বলে সাফ উত্তর পেয়েছেন।
বাংলাদেশের সাত লাখের বেশি লোক বর্তমানে ওমানে কর্মরত। রেমিট্যান্স আসার দিক থেকে দেশটির অবস্থান শীর্ষ দশে রয়েছে। পাসপোর্টসহ বিভিন্ন কনস্যুলার সেবা নিতে প্রতিদিন দূতাবাসে আসেন কয়েকশো কর্মী। দূরের শহরগুলো থেকে আসা প্রবাসীদের বেশিরভাগেরই হোটেল ভাড়া দেওয়ার মত আর্থিক সামর্থ্য থাকেনা। তাই কোনো কারণে দূতাবাসে আসার দিনে সেবা না পেলে মাঠে কিংবা সমূদ্র পাড়েই রাত কাটাতে হয় তাঁদের। এরপরেও কখনো কখনো কাঙ্খিত সেবা তো মিলেই না বরং অকারণে তাদের সঙ্গে কর্মকর্তারা দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ এসব সেবাপ্রত্যাশীর। কমিউনিটি নেতারা বলছেন, দূতাবাসের কার্যক্রম আরও প্রবাসীবান্ধব করা গেলে রেমিট্যান্সের ধারা আরও উর্ধ্বমুখী হবে। এ লক্ষ্যে অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও প্রত্যাশা তাদের।
বিষয়টি নিয়ে পরে দূতাবাসের সঙ্গে আলাপ করা হয়। সব শুনে ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল ইসলাম এদিনের ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে প্রবাসীদের যেন আর কোনো ভোগান্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
