মধ্যপ্রাচ্যর দেশ সৌদি আরবে থামছেই না প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী নির্যাতন। নারী গৃহকর্মীদের ধর্ষণ, মারধর শেষে মিথ্যা মামলায় পাঠানো হচ্ছে কারাগারে। রিয়াদ ও জেদ্দার দুই আশ্রয়কেন্দ্রে নির্যাতিত অর্ধশত নারী গৃহকর্মী দেশে ফেরার প্রহর গুনছেন।
অভিবাসন কর্মীরা বলছেন, বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘন হলেও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিষ্ক্রিয়তায় সৌদি সরকারের কাছে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরা যাচ্ছে না। সিলেটের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ফরিদা (ছদ্মনাম)।
বৃদ্ধ দিনমজুর বাবা, গৃহিণী মা আর ছোট তিন বোনের জীবনে খানিকটা স্বচ্ছলতা আনার আশায় স্থানীয় প্রতিবেশীর নির্ভরতায় পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে। মাসিক ৩০ হাজার টাকায় গৃহকর্মী হিসেবে তাকে পাঠানো হয় মদিনা শহরে।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী জানান, সৌদি যাওয়ার পরই তার পাসপোর্টসহ সব কাগজপত্র নিয়ে নেয়। এরপর প্রতিদিনই শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে। ছুরি দিয়ে হাত পর্যন্ত কেটে দিয়েছে। আর সেগুলো ঢাকতে মালিকপক্ষ উল্টো মামলা ঠুকে দেয়। শুধু তাই নয়, খাবারের মাধ্যমেও নির্যাতন করা হতো বলে জানান তিনি। বলেন, ‘তাদের খাওয়া শেষে হাড় বা উচ্ছিষ্ট যা থাকতো তাই খেতে দিত।’ তবে চোখে যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তার বাস্তব রূপ আর দেখতে পারেননি। স্বপ্ন আবার ফিরেছে জীবন্ত লাশ হয়ে। চোখের সব আলো কেড়ে নিয়েছে মরুর তপ্ত বালি।
এর আগে, নারী গৃহকর্মী পাঠাতে বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের মধ্যে ২০১৫ সালে চুক্তি হয়। সেই থেকে নির্যাতন ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর হাজারো ঘটনা ঘটলেও ন্যূনতম তদন্ত হয়নি। ২০২১ সালে আবিরন বেগমকে হত্যা ছাড়া বাকি একটি ঘটনারও বিচার হয়নি।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক আল আমিন নয়নের মতে, নারীদের কাজের কথা বলে নিয়ে গিয়ে তাদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছে দালালরা। এ থেকে পরিত্রাণে সতর্কতা এবং বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান আল আমিন নয়ন।
একই কথা বলছেন বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরাও এমন অভিযোগ পাই। তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। নিয়োগবিধি মানা হচ্ছে না। কিন্তু দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়- কেউ কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের আরও সক্রিয় হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মীরা আছেন বলেই দূতাবাস আছে, সেখানে কর্মকর্তারা আছেন। এতো টাকা বেতন দিয়ে, সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের এমনি এমনি রাখা হয়নি তাদের আরও কর্মীবান্ধব হতে হবে। যে ব্যবহার আমরা পাচ্ছি তা কাম্য না।
এদিকে, পাশের দেশ নেপালের কর্মীদের বেতন ১ হাজার ৬০০ রিয়াল, ফিলিপাইনের ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার রিয়াল হলেও বাংলাদেশের নারী কর্মীদের বেতন ধরা হয় মাত্র ৮০০ রিয়াল।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
