ফরিদপুরের সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের টিটুল মিয়ার একমাত্র ছেলে প্রবাসী সাকিল মিয়া (২৪) দালালের খপ্পরে বিদেশে যেয়ে এখন সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের হাতে জিম্মি।
আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে মুক্তিপণের ১৫ লাখ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে জিম্মিকারীরা। এ অবস্থায় তার পরিবার এখন দিশেহারা। সামান্য কৃষক পরিবারের এই সন্তানকে মুক্ত করার জন্য সাকিলের বাবার পক্ষে এতো টাকা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব না বলে তারা এখন অজানা শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে উঠেছেন।
টিটুল মিয়ার পরিবার জানান, একই গ্রামের মুকুল ঠাকুর নামে একজন দালালের খপ্পরে পরে জমি বিক্রি করে ধার-দেনা করে ১২ লাখ টাকা গুছিয়ে তারা সাকিলতে বিদেশে পাঠায়।
কিন্তু দুই মাস না যেতেই এখন তাদের কাছে আরো ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। ইমোতে সাকিলকে নির্যাতনের কল রেকর্ড শুনিয়ে বলা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই টাকা দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, সাকিলের বড় বোন বৃষ্টি আক্তার জানান, তারা এক ভাই এক বোন। তার বিয়ে হয়ে গেছে আগেই। একমাত্র ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তার বাবা একই গ্রামের মুকুল ঠাকুরের হাতে ১২ লাখ টাকা তুলে দেন।
গত ৪ জানুয়ারি প্রথমে সাকিলকে সড়কপথে ভারতে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে বিমানযোগে দুবাই হয়ে ১৪ জানুয়ারি লিবিয়ায় নিয়ে যায়। এরপর লিবিয়ায় একটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয়। তখন কয়েকদিন স্বাভাবিক কথাবার্তাও হয়েছে সাকিলের সঙ্গে তাদের।
কিন্তু ১২ দিন আগে তার বাবার মোবাইল ফোনের ইমোতে একটি কল আসে। তখন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে তার ভাই হাউমাউ করে বলেন, তার ওপর অমানসিকভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এমনকি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাকিল আর্তনাদ করে বলেন,‘আব্বা আরো ১৫ লাখ টাকা দিতেই হবে, নইলে ওরা আমাকে মাইর্যা ফেলবে’।
তিনি জানান, সাকিলকে নির্যাতনের সময় ইমোতে কল দিয়ে শোনানো হয় বাড়ির লোকদের। ওরা তাকে খাবারও দিচ্ছেনা ঠিকমতো। বড় বোন বৃষ্টি বলেন, নির্যাতনকারীরা বাংলা ভাষাতেই কথা বলেছেন। এখন তারা মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করছেন।
এদিকে, সাকিলের বাবা টিটুল মিয়া কান্নাজড়িত গলায় বলেন, ‘আমি এত টাকা পাবো কোথায়। শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ১২ লাখ টাকা জোগাড় করছি৷ সেই টাকা আগেই মুকুল ঠাকুরের হাতে তুলে দিছি। এখন আমি কি করবো।’
এদিকে, সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। এখন তাকে উদ্ধারের জন্য পরিবার যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে সহযোগিতা করা হবে।
ঢাকায় দূতাবাসে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতাও করা হবে।’ নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ওই পরিবার যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে দালালচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে।’
এদিকে, সালথা থানার ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মুকুল ঠাকুরের নামে মানবপাচারের কোনো মামলা আছে কি না, আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
