হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের পাইলিং কাজের পদ্ধতি বদল করায় নির্মাণ ব্যয় হ্রাস পেয়েছিল। মূলত, এই পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে প্রতিটি পাইলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইস্পাতের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। এছাড়াও, পাইলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ও কমে গিয়েছিল। ফলে, মোট ব্যয় প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ ডলার কমে গিয়েছিল।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সাশ্রয় হওয়া সেই অর্থে দুটি পিয়ার বর্ধনকাজ এবং একটি নতুন ভিভিআইপি টার্মিনাল বানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার বাড়ার কারণ দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেছে। এই অবস্থায় বেবিচক বর্ধিত কাজের প্রকল্পটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে অতিরিক্ত দুটি পিয়ার বর্ধনকাজের জন্য আগে যে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে এখন কুলাচ্ছে না। বেবিচকের পরিকল্পনা ছিল সাশ্রয় হওয়া অর্থ দিয়ে বাড়তি কাজগুলো করার। কিন্তু ডলারের দাম বাড়ায় নির্মাণসামগ্রীর দামও বেড়েছে।
কী পরিমাণ দাম বেড়েছে, সে জন্য অতিরিক্ত কত অর্থ লাগবে, সেটি যাচাই-বাছাই করে বেবিচকের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দেখতে পায়, তাদের প্রাক্কলিত অর্থের চেয়ে ঠিকাদারের দাবির পরিমাণ অনেক বেশি। ঠিকাদার চায় ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ বেবিচকের পরামর্শকের হিসাবে ৯০০ থেকে ৯৫০ কোটি টাকার মধ্যে কাজটি হওয়ার কথা।
সূত্রমতে, পরে বেবিচকের প্রাক্কলন অনুযায়ী অন্য ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজটি করতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিকে (জাইকা) প্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ, তহবিল আসবে জাইকা থেকে। তবে অন্য ঠিকাদারের বিষয়টি জাইকা অনুমোদন না করায় বেবিচক আপাতত প্রকল্পটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘পিয়ার এক্সটেনশন অর্থাৎ আরও যে দুটি উইং করার কথা, তার জন্য আমাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ অর্থ দাবি করছে, তা আমাদের হিসাবে বেশি। যদিও সে পরিমাণ অর্থ দিতে জাইকা রাজি আছে। কিন্তু আমাদের যে হিসাব, সে অনুযায়ী যদি জাইকা লোন দিত, তবে আমরা এক্সটেনশনের কাজটি শুরু করতাম।
কিন্তু জাইকা এতে রাজি না হওয়ায় আমরা কাজটি বন্ধ রেখেছি। তবে ভবিষ্যতে ঠিকাদারেরা যদি আমাদের বাজেট অনুযায়ী কাজ করতে রাজি হয় কিংবা আমরা যদি দেখি জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় খরচ আসলেই বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে আবারও কাজটি শুরু করা হবে। কারণ, আমরা কোনোভাবেই চাই না সরকারি অর্থের অপচয় হোক।’
জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প ফেজ-১ ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকার। সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি।
তখন থেকে পুরোদমে কাজ চলার মধ্যেই গত বছর তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। প্রকল্পের মূল নকশায় ভিভিআইপি টার্মিনাল থাকলেও কাজের শুরুতে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। গত বছর আবার ভিভিআইপি টার্মিনাল যুক্ত করার পাশাপাশি তৃতীয় টার্মিনালসংলগ্ন এলাকায় দুটি পিয়ার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুটি পিয়ার বাড়ানো হলে আরও ৩০ হাজার বর্গমিটার জায়গা যুক্ত হবে তৃতীয় টার্মিনালে।
বেবিচকের সূত্রমতে, সময় বাঁচাতে আলাদা দরপত্রের পরিবর্তে মূল চুক্তির অধীনে কাজ দুটি করার সিদ্ধান্ত ছিল। এ বিষয়ে আইনগত জটিলতা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও। জাইকা থেকেও অনাপত্তি পাওয়া যায়।
প্রকল্পের মূল চুক্তিমূল্য অপরিবর্তিত রেখে অতিরিক্ত কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আপাতত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
