দীর্ঘদিন ধরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো ১২টি উড়োজাহাজ। তবে শিগগির এগুলোর নিলাম প্রক্রিয়া আরম্ভ হবার পথে। আদালতের দেয়া উপদেশে বিমানগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। শীঘ্রই এগুলোর নিলামের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম। কামরুল বলেন, বহুল প্রতিক্ষিত নিলামের প্রক্রিয়া নির্ধারণে কর্মপদ্ধতি ও সুপারিশমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনি মতামত নিয়ে ধাপ মেনে এগোচ্ছি। থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়ার আগেই নিলাম সম্পন্ন করতে পারবেন বলেও আশা তার। বিমানগুলো সরিয়ে নেয়া হলে কমপক্ষে ৭/৮টি উড়োজাহাজ এখানে পার্কিং করা সম্ভব হবে।
দেখা যায়, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো বিমানবন্দরের উত্তর পাশের জেনারেল্ এভিয়েশন হ্যাঙ্গারের সামনে পার্কিং করা। যার অধিকাংই অকেজো ও উড্ডয়ন যোগ্য নেই। সারি সারি পড়ে থাকা এসব জাহাজ দেখতেও অনেকটা দৃষ্টিকটু লাগে। বেবিচকের দৃষ্টিতে এগুলো বিমানবন্দরের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। যত দ্রুত এগুলো সরিয়ে নেয়া যায় বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনার জন্য ততই সুবিধা। অথচ বার বার চিঠি দেওয়ার পরও মালিকানা কোম্পানিগুলো কোনো সাড়া দেয়নি। কোনো সাড়া না পেয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে বছরখানেক আগে নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইনি জটিলতায় কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শ দিয়ে এগুলো আইনি কাঠামোতে বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিলামে তোলার একক এখতিয়ার পায় বেবিচক। তারপরই দ্রুত নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বেবিচক সূত্র জানিয়েছে, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেসরকারি মালিকানার উড়োজাহাজগুলো পড়ে আছে। এইসব কয়টা এয়ারলাইন্সই এখন বন্ধ। পরিত্যক্ত এসব উড়োজাহাজ সরিয়ে নিতে কয়েক দফা চিঠি পাঠানো হয়। তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে বছরখানেক আগে নিলামের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধে ছয় মাসের সময় চান। ছয় মাস পরে তাদের আর কোনো সাড়া মেলেনি। ফলে দীর্ঘদিন বিমানবন্দরের কার্গো-ভিলেজের বড় জায়গাজুড়ে প্লেনগুলো পড়ে আছে। পাশাপাশি এসব প্লেনের পার্কিং এবং সারচার্জ বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় সাড়ে আটশ’ কোটি টাকা।
পরিত্যক্ত এক ডজন উড়োজাহাজ সরানো হলে যে জায়গা ফাঁকা হবে, সেখানে কমপক্ষে ৭/৮টি প্লেন পার্কিং করা যাবে। কিন্তু বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও মালিকপক্ষ কোনো সাড়া না দেয়ায় এগুলো এখন বিমানবন্দরের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর কারণে বিমানবন্দর বিশাল এক ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। ঘিঞ্জি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কার্গো-ভিলেজ এলাকায়। এগুলো সরিয়ে নেওয়া হলে সেখানে কমপক্ষে সাতটি প্লেন পার্কিং করা যাবে। একইসঙ্গে কার্গো প্লেনে মালামাল ওঠানামাও সহজ হতো।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বিমানবন্দরে পড়ে আছে। আমরা বেবিচকের পক্ষ থেকে অনেকবার তাগিদ দিয়েছি এগুলো সরিয়ে নিতে। কিন্তু তারা কোনো জবাবও দেয়নি, সরিয়েও নেয়নি। সেজন্য এখন সিভিল এভিয়েশন আইন অনুযায়ী- পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো বাজেয়াপ্ত করে দ্রুত নিলামের কার্যক্রম চলছে।
বেবিচক সূত্র জানিয়েছে, এই এক ডজন উড়োজাহাজ এককভাবে কেউ হয়তো কেনার জন্য আগ্রহী হবে না। হয়তো কয়েকজন মিলে এগুলো নিলামে কিনতে পারে। এগুলো নিলাম করতে পারলে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া টাকা যেমন উসুল হবে, তেমনি কার্গো-ভিলেজে জায়গাও ফাঁকা হবে। তবে নিলামে কাক্সিক্ষত দাম না পেলে প্রয়োজনে প্লেনগুলো কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়া হবে। যেমন এর আগে বিমানের একটি ডিসি ১০ উড়োজাহাজ নিলামে কেজি ধরে বিক্রি করা হয়েছিল। সেগুলো নিয়ে ঢাকার ধোলাইখালে বিক্রি করেছিল যিনি নিলাম পেয়েছিলেন। তবে এখানে কয়েকটি উড্ডয়নযোগ্য উড়োজাহাজ রয়ে গেছে। যেগুলো মেরামত করে হয়তো ওড়ানো যেতে পারে।
পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৮টি। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি ও এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ এখন বিমানবন্দরের উত্তর পাশে পার্কিং করা। এগুলোর কয়েকটিতে মরিচা পড়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব প্লেনের পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের। এ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৬০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বেবিচকের। ২০১২ সালে জিএমজি এয়ারলাইন্স তাদের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত করে। এরপর আর কখনো ওড়েনি।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছ থেকে বকেয়ার পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় রিজেন্ট। এর বাইরে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ কর্তৃপক্ষের কাছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বকেয়া ১৯০ কোটি টাকা। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র বিমানগুলোর রেজিস্ট্রেশন আগেই বাতিল করেছে বেবিচক। এরপর বিমানবন্দর থেকে প্লেন সরিয়ে নিতে দফায় দফায় নোটিস দেওয়া হয়েছে। বছরখানেক আগেও একবার বকেয়া আদায়ে প্লেনগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তখন কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধে ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। সেই সময় পার হয়ে গেলেও তাদের কোনো হদিস নেই।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
