সারাবিশ্বের উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলো যাত্রী সেবা নিশ্চিত করে একদিকে ব্যবসা বাড়াচ্ছে; অন্যদিকে নিজ নিজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। কখনো আবহাওয়াজনিত কারণ, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং অন্যান্য কারণে উড়োজাহাজ ছাড়া বিলম্ব হলে তা এসএমএস, ই-মেইলের মাধ্যমে যাত্রীদের জানিয়ে দেয়া হয়। যাত্রীরা যাতে সেবা পান এবং কোম্পানির ওপর রুষ্ট না হন সে জন্য আরো অনেকভাবে যাত্রীদের পরিসেবা দেয়া হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমান। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি ঘুষ, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, টিকেট কালোবাজারী, অযোগ্য লোকজনকে নিয়োগ নিয়মে পরিণত হয়েছে।
আকাশ পথে উড়োজাহাজ চলাচলে ‘নির্ধারিত সময়ে উড্ডয়ন’ এবং ‘যথারীতি সময়ে অবতরণের’ কথা থাকলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমানে সেটা খুব কমই দেখা যায়। পৃথিবীতে এখন শত শত বিমান কোম্পানির উড়োজাহাজ আকাশ পথে যাত্রী আনা-নেয়ার ব্যবসা করছে। সেবার মান বৃদ্ধি করে ওই সব কোম্পানি ব্যবসা বাড়াচ্ছে এবং লাভবান হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের মর্যাদাও বাড়াচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের পতাকা বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিযোগিতায় শুধু পিছিয়েই পড়ছে না বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকেও ডুবাচ্ছে। কিছু অযোগ্য ব্যাক্তির ইচ্ছামাফিক চলছে রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। টিকেট কাটতে গেলে টিকেট পাওয়া যায় না; অথচ প্রায়ই সিট ফাঁকা রেখে চলাচল করে বিমান।
দেশের অর্থনীতির চাকা যাদের পাঠানো অর্থে সচল থাকে, সেই প্রবাসীদেরই বিদেশ যাতায়াতে বিমান এবং বিমানবন্দরে হয়রানি করা হচ্ছে যাচ্ছেতাইভাবে। শুধু বিদেশ ফেরত যাত্রীই নন, বিদেশ গমনের ক্ষেত্রেও যাত্রীরা নাস্তানাবুদ হচ্ছেন বিভিন্ন টেবিলে। সেবা নিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। প্রবাসী শ্রমিক যাত্রীদের সঙ্গে বিমান কর্মকর্তা ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের আচরণ খুবই খারাপ। প্রবাসী শ্রমিকদের বিমানের তথাকথিত শিক্ষিত কর্মকর্তারা ‘মানুষ’ মনে করেন না। তাই জন্তু-জানোয়ারের মতো ব্যবস্থা করেন এমন অভিযোগ প্রবাসীদের।
চলতি বছরের মার্চ মাসের ঘটনা। দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি যাবেন মালয়েশিয়া। বিমানের টিকেট কেটেছেন এবং ২ মার্চ যথারীতি বিমান ছাড়ার দু’তিন ঘন্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছেন। ভিআইপি হওয়ায় তিনি ভিআইপি লবি ব্যবহার করেন। বিমানবন্দরে ডিজিটাল মনিটরে দেখানো হচ্ছে বিমান ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়বে রাত ১১ টা ৩০ মিনিট। যথারীতি যাত্রীদের উড়োজাহাজে উঠানো হলো। কিন্তু নির্ধারিত সময় সাড়ে ১১টায় উড়োহাজাজ ছাড়ে না। অতপর জানানো হলো বিমান ছাড়বে সাড়ে ১২ টায়। সাড়ে ১২টায় উড়ছে না বিমান। সেই স্বনামধন্য ব্যাক্তি দেখলেন পাশের কয়েকটি সিটে বসে রয়েছেন শুকনোমুখের বিধ্বস্ত কয়েকজন মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের খাওয়া হয়নি, মুখের দিকে তাকালেই তাদের ক্ষুধার্ত মুখ বোঝা যাচ্ছে। তিনি ওই যাত্রীদের পরিচয় এবং কোথায় যাচ্ছেন জানতে চান। যাত্রীরা জানালেন পঞ্চগড়ে বাড়ি। কাজ করতে বিদেশ যাচ্ছেন। পথে যানজট হতে পারে আশঙ্কায় তারা পঞ্চগড় থেকে পহেলা মার্চ রওয়ানা দিয়েছেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথে যথারীতি যানজটে পড়েছেন। দু’দিন ভাত খাওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন- বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেল বিমান
গরীব মানুষ, তাই বিমানবন্দরে উচ্চমূল্য দিয়ে ভাত খাওয়ার সামর্থ্য হয়নি। পয়সা না থাকায় এটাসেটা খেয়ে ক্ষুধা নিবারনের চেষ্টা করেছেন। বিমান ছাড়ার ৬ ঘন্টা আগে বিমানবন্দরে এসেছেন। ইমিগ্রেশনের পর দীর্ঘ সময় ভিতরেই ছিলেন। বিমানবন্দরে সহযাত্রীরা বলেছিল বিমানে উঠলেই খাবার দেয়া হবে। অথচ বিমানে যাত্রী ওঠার পরও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে কুয়ালালামপুরগামী বিমান বাংলাদেশের উড়োজাহাজ। অন্যান্য যাত্রীরা ধৈয্যহারা হয়ে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করছেন বিমান ছাড়তে বিলম্বের কারণ। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা লা পাত্তা। যারা রয়েছেন তারা কেউ বিমানের বিলম্বের খবর দিতে পারছে না। বিমানের কর্মকর্তাদের খুঁজে না পাওয়ায় যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়েন। রাত একটার সময় হঠাৎ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসে যাত্রীদের জানান আজকের ফ্লাইট বাতিল।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
