বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে যাত্রী পরিবহনের নামে প্রাইভেটকারের মাধ্যমে ফেনসিডিল পাচারকালে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মো. সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩। এসময় তার কাছ থেকে ১১ লাখ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মো. সোহেল রানা নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ির মো. আলী হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে।
গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গত রাতে রাজধানীর কাপ্তানবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রাইভেটকারের ভিতরে বস্তার মধ্যে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ৫৮১ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক পাচার চক্রের মূলহোতা মো. সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম হতে নারায়ণগঞ্জে ফেনসিডিলের চালানটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের এক ব্যক্তির চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা হতে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে ফেনসিডিলের চালান আনার জন্য প্রাইভেটকার নিয়ে রওনা করে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ডিলারের কাছ থেকে ফেনসিডিল নিয়ে সে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
সোহেল রানা আরও জানায়, তিনি ভাড়ায় প্রাইভেটকারটি চালান। প্রাইভেটকারের মাধ্যমেই সে যাত্রী পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করার আড়ালে মাদক ব্যবসা করে থাকে। মাদক ব্যবসার কাজটিকে ঝামেলামুক্ত ভাবে পরিচালনা করার জন্য সে মূলত রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা হতে যাত্রী পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে থাকে এবং সেখান হতে মাদকের চালান নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তা পৌঁছে দেয়।
সোহেল রানা নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার হনুফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৪ সালে এসএসসি পাশ করেন। এসএসসি পাশ করার পর তিনি রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার জন্য তেজগাঁও এলাকায় মেসে বসবাস শুরু করে। সেখান হতে সে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে। ইতিমধ্যে ঢাকায় অবস্থানকালীন সময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং অবৈধ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের বিষয়টি তাকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে।
স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর কিছুদিন বেকার থাকায় ২০১১ সালে পরিবারের চাপে সে প্রবাসী হিসেবে দুবাই পাড়ি জমায়। দুবাই গিয়ে তিনি একটি শপিংমলে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি পায়। প্রবাস জীবনে সে সন্তুষ্ট হতে না পারায় চার বছর পর ২০১৫ সালে দেশে ফিরে আসে। দেশে ফিরে সে আবার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তারা তাকে মাদক পরিবহনের কাজে যোগ দেয়ার কথা বলে। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে নোয়াখালীর একটি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রাইভেটকার চালানো শিখে দীর্ঘ দেড় বছর মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মাদক পরিবহনের কাজ করে।
এরপর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে অধিক অর্থলাভের আশায় সে নিজেকে একজন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ২০১৭ সাল হতে যাত্রী পরিবহনের আড়ালে সে নিয়মিত মাদকের চালান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরাসরি ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে। গত ৫ বছরে সোহেল ৬০টিরও অধিক চালান দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দিয়ে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেছে বলে জানায়। প্রতিটি চালানে সে ৫০০ হতে সর্বোচ্চ ২০০০ বোতল পর্যন্ত ফেনসিডিল বহন করেছে বলে জানায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
