ঋণ খেলাপি, বেনামি ঋণ আর অর্থপাচারের কারণে ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারায় চলে গেছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ইসলামী ব্যাংকসহ কমপক্ষে তিনটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ভুয়া ঠিকানা ও অস্তিত্বহীন কোম্পানির বিপরীতে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সরিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে গগনচুম্বি বলছে সংস্থাটি। যে কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি ‘প্রকৃত মালিকানার স্বচ্ছতা’ আইন প্রণয়ন ও ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড’ -এ যুক্ত হওয়ার তাগিদ দিয়েছে টিআইবি।
ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার সংবাদ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য ভয়ংকর-উদ্বেগজনক মন্তব্য করে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাধারণ গ্রাহককে ব্যাংক থেকে ন্যূনতম অংকের ঋণ নিতে গেলেও যে পরিমাণ কাগজপত্র দিতে হয়, সেখানে কীভাবে ভুয়া কিংবা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে অবলীলায় হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে তুলে নেওয়া হচ্ছে?
গত ১৪ বছরে আগের তুলনায় মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ যখন প্রায় ৬ গুন বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বারবার খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে কিংবা পুনঃতফসিল করেও খেলাপি ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না। তখন কাদের স্বার্থে কিংবা কাদের দেখে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে এমন আগ্রাসী ঋণ দেওয়া হয়? প্রকৃতপক্ষে কারা এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সুুবিধাভোগী? এ প্রশ্নের উত্তর দেশবাসীর জানার অধিকার আছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে ব্যাপক আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ও পিকে হালদারের জালিয়াতির মাধ্যমে লুণ্ঠন ও অর্থ পাচারের পরও কেনো শিক্ষা নেওয়া হলো না? দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারের নির্ভরযোগ্য বহু তথ্য প্রতিনিয়ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে চালান জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঘটনায় খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে। পণ্য আমদানিতে ২০ থেকে ২০০ ভাগ পর্যন্ত বাড়তি দাম দেখানোর শতাধিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
নির্বাহী পরিচালক বলেন, অস্বাভাবিক ও প্রশ্নবিদ্ধ ঋণের উল্লিখিত ঘটনা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার পাশাপাশি কোনভাবেই যেন এসব অর্থ বিদেশে পাচার হতে না পারে সে বিষয়ে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে দেশে-বিদেশে সব প্রকারের লেনদেনের তথ্য আদান-প্রদান সহায়ক ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস)’-এ অবিলম্বে যুক্ত হতে হবে। একইসঙ্গে ভুয়া ও বেনামি ঋণ জালিয়াতি প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে অবিলম্বে ব্যক্তি মালিকানাধীন খাতে ‘প্রকৃত মালিকানার স্বচ্ছতা’ আইন প্রণয়ন করতে হবে।
টিআইবি মনে করে, যখন-তখন রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের মালিকানায় কিংবা শীর্ষ পদে বদল; এসব ব্যাংকের আমানতের অর্থ লোপাটে সহায়ক হয়। ব্যাংকের মালিকপক্ষ বা পরিচালনা পর্ষদই তখন ঋণ জালিয়াতিতে যুক্ত হয় এবং যোগসাজশের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুটপাটে জড়িত হওয়ার সুযোগও বহুগুনে বেড়ে যায়। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) সবশেষ প্রকাশিত হিসেব বলছে, বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতিবছর পাচার হওয়া অর্থের পরিমান ৮২৭ কোটি মার্কিন ডলার।
আরও পড়ুন:
ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ : আমানত নিয়ে
প্রবাস থেকেই খোলা যাবে বিকাশ ও নগদের
ওমান প্রবাসী বাংলাদেশি ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’র লাশ
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিলো ওমানের
শিশু আয়াতকে খুন করার ভয়ঙ্কর বর্ণনা দিলো অপরাধি
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
