মন শুধু যেতে চায়, নূরের ঐ মদিনায়, মরুর দুলাল যেথা নীরবে ঘুমায়। প্রতিটি মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে স্বপ্ন থাকে পবিত্র মক্কার কালো গিলাফের আঁচল ও সবুজ গম্বুজের ছায়া পেতে। কাবা শরিফের প্রাসঙ্গিকতা আসলেই দুই চোখে ভেসে ওঠে ‘বাইতুল্লাহ’র হৃদয়লোভন দৃশ্য। মুসলিম উম্মাহর অগণিত সদস্যের আশৈশব বাসনা— কাবার পবিত্র গিলাফ একবারের জন্য হলেও ছুঁয়ে দেখা।
সাধারণত পবিত্র কাবাঘরের চারপাশ— আদ্যোপান্ত কালো গিলাফে জড়ানো থাকে। স্বর্ণখচিত কোরআনের আয়াত ও বিভিন্ন পবিত্র শব্দ দিয়ে গিলাফে আঁকা থাকে আলপনা। এই লেখায় কাবার গিলাফের কিছুটা ইতিহাস— সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরি করা হয়, প্রায় ৭০০ কেজি প্রাকৃতিক রেশম দিয়ে। মোট পাঁচ টুকরা গিলাফ বানানো হয়।
চার টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি কাবাঘরের দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো মজবুতভাবে সেলাইযুক্ত। প্রতিবছর দুইটি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি করা হয়। হাতে তৈরি করতে সময় লাগে আট থেকে নয় মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়। এতে খরচ পড়ে প্রায় ২৫ মিলিয়ন রিয়াল বা ৫৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সমমূল্য।
১৪ মিটার উঁচু কালো রঙের এই গিলাফ সর্বমোট ১৬টি ছোট টুকরা দিয়ে সুবিন্যস্ত। কাবা শরিফের দরজায় ঝোলানোর জন্য আলাদাভাবে এতে সাড়ে ছয় মিটার উঁচু এবং সাড়ে তিন মিটার প্রস্থ পর্দা রয়েছে। গিলাফের এক-তৃতীয়াংশের ওপর দিকে ৯৫ সেন্টিমিটার প্রস্থের বন্ধনীতে সোনার প্রলেপকৃত রুপার সুতা দিয়ে কারুকার্যশোভিত আল্লাহর নাম এবং কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ক্যালিগ্রাফি খচিত করা হয়। আরো লেখা থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’, ‘আল্লাহ জাল্লা জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’, ‘ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান’ ইত্যাদি।
উত্তর দিকের অংশে লেখা থাকে, ‘খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের বাদশাহ সালমান ইবনে আবদুর রহমান আল সাউদের নির্দেশে এই গিলাফ পবিত্র নগরী মক্কায় তৈরি করা হয়েছে’। ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কাবাঘরের গিলাফ মিসর থেকে আসত। মাঝে ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত কাবার গিলাফ সৌদি আরবের মক্কায় তৈরি হয়েছিল। ১৯৩৯ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মিসর ফের সেই দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমানে সৌদি আরবে তৈরি হওয়া এই গিলাফও মিসরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে।
১৯৭৭ সালে নতুনভাবে স্থাপিত মক্কা নগরীর উম্মে জাওদ নামের জায়গায় অবস্থিত এ অত্যাধুনিক কারখানায় কাবাঘরের বাইরের ও ভেতরের গিলাফ তৈরি হয়। মদিনায় রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকে ব্যবহৃত অভ্যন্তরীণ গিলাফও এখানে তৈরি করা হয়। কারখানাটি ছয়টি অংশে বিভক্ত—বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং ও অভ্যন্তরীণ পর্দা বিভাগ। বর্তমানে এতে ২৫০ জনের বেশি শিল্পী নিয়োজিত আছেন।
হিজরতের পূর্বে কে গিলাফ পরিয়ে ছিল তাতে মতবিরোধ থাকলেও সকলে ঐকমত্য যে, হিজরতের ২২০ বছর আগে বাদশাহ তুব্বা আবি কারব আসাদ এ গিলাফের প্রথম প্রচলন করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এবং হযরত আবু বকর (রা.) কাবা শরিফে গিলাফ পরিয়ে দেন। এরপর থেকে মুসলিম খলিফা এবং শাসকেরা এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন।
এছাড়াও নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম কাবা শরিফের গিলাফ পরানোর সৌভাগ্য অর্জন করেন আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের জননী নুতাইলা। গিলাফ তৈরি করার পর তা কাবা শরিফের চাবি-রক্ষক বনি শাইবা গোত্রের মনোনীত খাদেমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১০ জিলহজ সবার সহযোগিতায় গিলাফ কাবা শরিফের নতুন গিলাফ গায়ে জড়ানো হয়।
গিলাফ পরিবর্তনের কাজে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববির কার্যপরিচালনা পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক নেতৃত্ব দেন। এ সময় সৌদি বাদশার প্রতিনিধিসহ দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। পুরাতন গিলাফ ঠিকভাবে টুকরো টুকরো করে প্রতি বছর বিভিন্ন মুসলিম সরকারপ্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপহার দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
সোনার হরিণের আশায় দুবাই যেয়ে ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন প্রবাসীরা
হাজিদের নিরাপত্তায় মক্কায় সামরিক বাহিনীর মহড়া
ওমানে বৃষ্টির সময় সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান
বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন
ওমানি যুবকের প্রশংসায় নেট দুনিয়া
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
