মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলোর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রতিবছর এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ১০ হাজার প্রবাসী শ্রমিক আরব উপসাগরীয় দেশগুলোতে মারা যান। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মৃত্যুগুলোর অধিকাংশই ব্যাখ্যাহীন থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলা হয়, প্রাকৃতিক কারণে স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে অথবা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে।
উপসাগরীয় দেশগুলো তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে কেন সেখানে এত বিদেশি শ্রমিক মারা যাচ্ছে। ‘ভাইটাল সাইন: দ্য ডেথ অফ মাইগ্রেন্টস ইন দ্য গলফ’ অনুসন্ধানি প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ফিলিপাইনের এনজিওগুলো এবং লন্ডনভিত্তিক প্রবাসী অধিকার বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফেয়ারস্কয়ার প্রজেক্ট মিলে তৈরি করেছে।
সস্তা শ্রমের প্রবাসী শ্রমিকরা উপসাগরীয় দেশগুলোতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। বিশেষ করে গরম, আর্দ্রতা, বাতাস দূষণ, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, নির্যাতনমূলক কাজের পরিবেশ, মানসিক চাপ ও হাইপার টেনশনসহ অনেক সমস্যার মুখোমুখি হন তারা। এছাড়া কঠিন গরমে দীর্ঘ সময় শারীরিক পরিশ্রমের কারণে হিট স্ট্রোকসহ শরীরের অঙ্গ অকেজো হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন শ্রমিকরা।

২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সৌদি আরবে জুলহাস উদ্দিন নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই সুপারভাইজার তাকে একটি ড্রেনের লাইনের ভেতরে প্রবেশ করালে তার মৃত্যু হয়। অথচ এই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি এবং মৃত্যু সনদে লেখা হয়েছে, হৃদযন্ত্র ও শ্বাস বন্ধ হওয়ায় মৃত্যু হয়েছে।
প্রায় ৩ কোটি বিদেশি শ্রমিক কাজ করছে উপসাগরীয় দেশগুলোতে (উপসাগরীয় দেশ- আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত)। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই স্বল্প পারিশ্রমিকের কাজগুলো করে থাকে। নির্মাণ শ্রমিক, হোটেল-রেস্টুরেন্টের ওয়েটার এবং বাসা-বাড়ির কাজের লোক হিসেবেই কাজ করে থাকেন। তাদের বেশিরভাগই আসেন এশিয়া ও আফ্রিকার গরীব দেশগুলো থেকে।

উপসাগরীয় দেশগুলোর উন্নয়নে বিদেশি শ্রমিকদের অবদান ও তাদের ওপর নির্ভরতার পরও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিতে কোনো চিন্তা নেই তাদের। আবার শ্রমিক পাঠানো দেশগুলোর রেমিট্যান্স আয়ের উৎস হওয়া সত্বেও নিজ দেশও তাদের দেখভাল করে না। ফলে মারা যাওয়া অনেক শ্রমিকের দেহও পৌঁছায় না নিজ দেশে। আর পৌঁছালেও কেবল ব্যাগে মোড়ানো দেহটাই থাকে কফিনে।
শ্রমিক শোষণের সমালোচনা থাকার পরও কাতারে আয়োজিত হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বকাপ। আরব উপসাগরীয় ছয়টি দেশ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না এবং এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যও করতে রাজি নয়। অপরদিকে নিজেদের শ্রমিক ও নাগরিকদের রক্ষায় রেমিট্যান্স অর্জন করা দেশগুলোরও কোন মাথাব্যথা নেই।
আরো পড়ুনঃ
- যেসব ভিসার ফি কমালো ওমান
- বাংলাদেশ থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিতে চায় রোমানিয়া
- সৌদি আরবে একদিনে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
- ইউক্রেনের বাঙ্কারে আটকা পড়েছে ২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
