সাসেক ঢাকা সিলেট করিডোর সড়কের উন্নয়ন কাজ ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে সিলেট জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মেগা প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সিলেটের প্রবাসীরা সব সময় আমাদের পাশে আছেন। ’৬৬ সালে জাতির পিতা যখন ৬ দফা দিলেন, তাকে যখন গ্রেফতার করা হলো। ’৬৮ সালের জানুয়ারিতে তাকে গ্রেফতারের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা ক্যান্টনম্যান্টে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ মামলা দেওয়া হয়, যেটা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। মূলত দেশদ্রোহী হিসেবে পাকিস্তান সরকার মামলাটি দেয়।
তিনি বলেন, সেই সময় তার মুক্তির আন্দোলনে সিলেটের ইংল্যান্ড প্রবাসীরা বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। সেজন্য তাদের সব সময় স্মরণ করি। আবার মুক্তিযুদ্ধেও ইংল্যান্ড প্রবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সিলেট।
রেলস্টেশন, বিমানবন্দরসহ সিলেটের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। সিলেটকে উন্নত বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আর দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা আমরা সব সময় স্মরণ করি। এসময় প্রধানমন্ত্রী দেশের আরো বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন আমরাই করে দিয়েছি। এবার সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সড়ক সুন্দরভাবে করে দিচ্ছি। প্রবাসীরা দেশে এসে দেখবেন, এটা দেশের রাস্তা, নাকি লন্ডনের রাস্তা।
দেশেই লন্ডনের রাস্তা দেখতে পারবেন প্রবাসীরা। যোগাযোগটা হলে পরে দেশ অনেকটা এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আর কেউ পিছিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো।
সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের। এর ফলে এ অঞ্চলের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র, গতি পাবে শিল্প ও পর্যটনে। শুধু তাই নয়, চার লেন হয়ে গেলে এ মহাসড়ক দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ারও আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হলে সিলেট অঞ্চলের পর্যটনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। যাতায়াতের সময় অর্ধেক কমে আসলে সিলেটমুখী হবেন পর্যটকরা। এছাড়া পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসাও পাবে নতুন গতি।
একনেকে অনুমোদনের প্রায় ৮ মাস পর আলোর মুখ দেখছে সিলেট-ঢাকা চার লেন মহাসড়ক মেগা প্রকল্পটি। চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন মেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের। ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ঋণ দেবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। আর বাকি ৩ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা দেবে সরকার।
ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেটের পীর হাবিবুর রহমান চত্বর পর্যন্ত প্রস্তাবিত সড়কটির দৈর্ঘ্য হবে ২০৯ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করবে সরকারের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সংস্থাটি।
উদ্বোধনকালে সিলেট থেকে সরাসরি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য মিলাদ গাজি, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, জেলা প্রশাসক এম কাজি এমদাদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদসহ প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
