বাংলাদেশের একদল তরুণ উদ্যোক্তা ফেসবুকের বিকল্প হিসেবে ‘হিকমাহ’ নামে একটি নতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করেছেন। তাদের দাবি, এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা এবং অশালীন বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কাজ করবে। এখানেই থেমে না থেকে, এই উদ্যোক্তারা ইউটিউবের একটি বিকল্পও নিয়ে এসেছেন, যা সম্পূর্ণভাবে শিশুবান্ধব বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
বর্তমান সময়ে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত প্রায় সকলকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। ফেসবুক, ইউটিউব এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তবে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, ব্যবহারকারীদের দ্বারা হয়রানি, আপত্তিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্টের উপস্থিতি এবং গুজব বা মিথ্যা তথ্যের বিস্তার প্রায়শই ব্যবহারকারীদের নানা ধরনের বিড়ম্বনায় ফেলে।
অনেক ব্যবহারকারী মনে করেন, নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করে এই প্ল্যাটফর্মগুলো সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। যেখানে চাইলেই যে কেউ খারাপ মন্তব্য করার সুযোগ পাচ্ছে, যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, নেটিজেনদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একদল তরুণ উদ্যোক্তা ‘হিকমাহ’ নামক একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে এসেছেন, যা ফেসবুকের মতোই কার্যকারিতা প্রদান করবে। উদ্যোক্তাদের দাবি, ব্যবহারকারীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই প্ল্যাটফর্মে অত্যাধুনিক সব ফিচার যুক্ত করা হয়েছে।
হিকমাহ-এর পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার মো. আহনাফ আহমিদ সাদ জানান, এটি এমন একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম হবে যেখানে মানুষ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করবে এবং একে অপরের প্রতি হয়রানি, গুজব ছড়ানো বা বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করবে না। এছাড়াও, ইউটিউবের বিকল্প হিসেবে ‘মাহফিল’ নামে একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে নৈতিকতাবিরুদ্ধ কোনো কনটেন্ট থাকবে না বলে উদ্যোক্তারা নিশ্চিত করেছেন। শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ সাইবার জগৎ তৈরির লক্ষ্যে ‘কাহফ কিডজ’ নামে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্ট দেখার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। মাহফিলের সিইও আল আমিন শাহরিয়ার বলেন, একটি সুস্থ প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারী তার নৈতিক মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হবে না। কাহফ কিডজের প্রোডাক্ট ম্যানেজার নাহিদ ইসলাম নীরব জানান, তারা শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের উভয়ের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকারি নীতিমালায় পরিবর্তন আনা উচিত। বুয়েটের সিএসই বিভাগের শিক্ষক ড. এ কে. এম আশিকুর রহমান বলেন, সরকারের নীতিমালা আরও সহজ ও উদ্যোক্তাবান্ধব হওয়া প্রয়োজন। কারণ বর্তমানে এআইয়ের যুগ এবং বাংলায় একটি বৃহৎ ভাষার মডেল (এলএলএম) ব্যবহার করে অনেক অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা সম্ভব। নিরাপদ সাইবার জগৎ প্রদানের লক্ষ্যে এই ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের চাহিদা এখন অনেক বেশি। প্রচলিত মাধ্যমগুলো যখন ব্যবহারকারীদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তখন বাংলাদেশের এই উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা নতুন আশার সঞ্চার করছে। দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করছে, যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করেছে।
আরও দেখুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
