ঝালকাঠির বাসন্ডা ইউনিয়নের দারখী গ্রামের আকাশ মোল্লার বিরুদ্ধে সমুদ্রপথে ইউরোপে লোক পাঠানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ছোট ভাইয়ের বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আকাশ সামাজিক মাধ্যমে সেই জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের ভিডিও প্রকাশ করলে ভুক্তভোগীদের স্বজনরা তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপর গত শনিবার প্রতারিত যুবকদের পরিবারের সদস্যরা আকাশ মোল্লার বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আকাশ ও তার স্ত্রী কৌশলে পালিয়ে যান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আকাশ মোল্লা মালয়েশিয়া প্রবাসী বেশ কয়েকজন যুবককে ১৮ লাখ টাকা চুক্তিতে সমুদ্রপথে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপে আটকে রাখেন। সেখানে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আরও বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করা হয়। দাবিকৃত টাকা না পাঠালে নির্যাতনের ভিডিও স্বজনদের কাছে পাঠানো হতো। আকাশের এই চক্রের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি তার অবস্থান নিশ্চিত করেন এবং নির্যাতনের প্রমাণসহ ঝালকাঠিতে এসে হাজির হন। প্রথমে আকাশের পরিবারের সদস্যরা তার বাড়িতে থাকার কথা স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে আকাশের স্ত্রী সুমনা আক্তার সাথী উত্তেজিত হয়ে ভুক্তভোগীদের স্বজনদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরবর্তীতে গণমাধ্যমকর্মী ও প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তিনিও আত্মগোপন করেন। রাত ৮টার দিকে সদর থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযোগ শোনার জন্য ভুক্তভোগী পরিবার ও তাদের স্বজনদের থানায় নিয়ে যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে আসা অরুণ মিয়া অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে জানান, তার ছেলে আলাউদ্দিনকে উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়া পাঠিয়েছিলেন। আকাশ তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে এবং পরবর্তীতে আরও টাকা চেয়ে নির্যাতন করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আকাশ এখানে আছে জানতে পেরে আসার পরেও পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি, বরং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নীরব থেকেছে।
তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সাধারণত যেখানে ঘটনা ঘটে সেখানেই মামলা দায়ের করা হয়। যেহেতু আকাশ মোল্লাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি, তাই তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কিছু করার ছিল না। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, মাদারীপুরের পারুল বেগমের ছেলে আরাফাত সরদার ও তার ভাইয়ের কাছ থেকে আকাশ ব্যাংক এজেন্ট ও চেকের মাধ্যমে তিন কিস্তিতে মোট ৩৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। এরপর ইন্দোনেশিয়ায় আটকে রেখে আরও ৬ লাখ টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে নির্যাতনের ভিডিও পাঠান। একই কায়দায় মুন্সীগঞ্জের সুমন হালদার, তাইম হোসেন ও তমিজ হোসেনসহ প্রায় ৪০ জন যুবকের কাছ থেকে আকাশ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং তাদের জিম্মি করে নির্যাতন চালাচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের স্বজনরা আকাশের বাড়িতে অবস্থান নিলে তার স্ত্রী তাদের অস্ট্রেলিয়া না পাঠানোর হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আকাশ ও তার পরিবার সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে বিলাসবহুল জীবনযাপন শুরু করেছেন, যা তাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আকাশ এবং তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ভাই রাতুল হাসান পলক জানান, তারা বাড়িতে নেই। এ বিষয়ে ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জল কুমার রায় জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী যুবকদের স্বজনরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
আরও দেখুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
