রাজবাড়ীতে সালমা বেগম (২৫) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘর থেকে টাকা লুটের অভিযোগে হেমায়েত উদ্দিন (৩০) নামে এক ঘাতককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের হাউলি জয়পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সালমা বেগম হাউলি জয়পুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আজাদ মল্লিকের স্ত্রী। তাদের সাদিক নামে ৭ বছর বয়সের এক ছেলে ও সিনহা নামে ৫ বছর বয়সি এক মেয়ে রয়েছে।
ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজবাড়ীর সদর থানা পুলিশ নোয়াখালির চর জব্বার থানার চর ক্লার্ক গ্রামের আহসানউল্লার ছেলে হেমায়েত উদ্দিন (৩০) গ্রেফতার করেছে। হেমায়েত ওই হত্যা মামলার ১নম্বর আসামি।
জানা যায়, স্বামী আজাদ মল্লিকের বাড়ির ঘরের খাটের ওপর সালমার গলা কাটা ও ওড়না পেঁচানো মরদেহ দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা।
প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে আসামি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আসামির স্বীকারোক্তি মতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ঘটনাস্থলের পাশের গ্রাম নূরপুরের জনৈক কৃষ্ণ হালদারের পুকুর হইতে উদ্ধার করা হয়েছে।
পরকিয়া সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
নিহত গৃহবধূ সালমার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম সালমা ও তার স্বামী আজাদ মল্লিক দু’বছর আগে ঢাকার ফুটপাথে ভাত বিক্রি করত। এ সময় ঘাতক হেমায়ত প্রায়ই ভাত কিনে খেত। সেখান থেকে সালমার সাথে হেমায়েতের পরকিয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তা টের পেয়ে আজাদ মল্লিক স্ত্রীর-সন্তানদের রাজবাড়ী হাউলি জয়পুর নিজ বাড়িতে রেখে সৌদি চলে যায়। এরপরও হেমায়েত সালমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইলে সালমা অসম্মতি জানায়। আর এতেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে সলমাকে খুন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাহমুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘সালমা বেগমের গলায় ওড়না পেঁচানো মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার কারণ উদঘাটন ও এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।’
সালমার শাশুড়ি লতা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ঈদের আগে সৌদি আরব থেকে এক লাখ টাকার ওপরে পাঠিয়েছে। দূর্বৃত্তরা সালমাকে হত্যা করে ঘর থেকে টাকা ও সালমার নাকের নাকফুল নিয়ে গেছে।’
লতা বেগম আরো বলেন, ‘আমার ছেলে আজাদ চার বছর ঢাকার নারায়নগঞ্জে দর্জির কাজ করেছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সে নারায়ণগঞ্জে থাকত। দু’বছর আগে সে পরিবার নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। দেড় বছর আগে সে সৌদি আরব চলে যায়। সে সৌদি যাওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী সালমা দুই শিশু সন্তান নিয়ে বাড়িতেই থাকত।
লতা বেগম আরো বলেন, ‘ঈদের ঘটনার দিন সোমবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে সালমা দুই শিশু সন্তান নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমাতে যায়। অন্য ঘরের এক কক্ষে আমি ও আমার ছোট ছেলে রাহাত ঘুমাই, অন্য কক্ষে আমার বড় ছেলে আমজাদ ও তার স্ত্রী মিম ঘুমায়। সকাল ৬টার দিকে আমি ঘুম থেকে ওঠে সালমার ঘরের সামনে গিয়ে নাতি সাদিককে ডাক দেই। এসময় সাদিক ঘরের ভেতর থেকে কান্না করে বাইরে থেকে দরজা খুলতে বলে। তখন আমি দেখি ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। আমি দরজা খুলে ঘরের ভেতর ঢুকে দেখি সালমা খাটের ওপর চিৎ করে শোয়া অবস্থায় রয়েছে। তার শরীর কাঁথা দিয়ে ঢাকা এবং গলায় ওড়না দিয়ে টাইট করে পেঁচানো। তার দু’পাশে দুই সন্তান বসে আছে।
সালমার সাত বছর বয়সি ছেলে সাদিক বলে, ‘রাতে আমাদের ঘরে হিমায়েত এসেছিল। তার সাথে মুখোশ পড়া আরো দু’জন ছিল। তারা আমার আম্মুকে মেরেছে।হেমায়েত কে জানতে চাইলে সাদিক বলে, ‘আমরা যখন ঢাকায় থাকতাম, তখন হিমায়েত আমাদের আঙ্কেল হতো।’এদিকে সালমার শ্বশুরবাড়ির কিংবা বাবার বাড়ির কোনো সদস্য হিমায়েত নামে কাউকে চিনেন না বলে জানিয়েছেন।
আজাদ ও সালমা ঢাকায় থাকাকালে হিমায়েত নামে কারো সাথে পরিচয় থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
