রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে এলিট ফোর্স র্যাবের পরিচয় দিয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। কালো মাইক্রোবাসে হ্যান্ডক্যাপ, বেতের লাঠি ও র্যাব লেখা জ্যাকেট পরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের টার্গেট করে আসছিল। সড়কের নির্জন স্থানে প্রবাসী বহনকারী লাগেজবাহী গাড়ি থামিয়ে তল্লাশির নামে তারা র্যাব পরিচয়ে সর্বস্ব লুটে নিত।
সম্প্রতি, নিউমার্কেট থানা পুলিশ হাতিরপুল রোড এলাকা থেকে এক প্রবাসীর ১৯ লাখ টাকার মালামাল লুটের ঘটনার তদন্তে নেমে এই প্রতারক চক্রের সন্ধান পায়। তৎপরতার সাথে অভিযান চালিয়ে গত কয়েক দিনে পুলিশ চক্রের মূলহোতাসহ আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো – আল আমিন হাওলাদার (৪০), ওমর ফারুক (৩৪), ফারুক বেপারী (৩৯), শহিদুল ইসলাম শেখ (৪১), মো. মানিক (২৭), জহিরুল ইসলাম জহির (৪৮), আল-আমিন আহম্মেদ (৪০) এবং মো. বারেক (৪৪)। পুলিশ জানিয়েছে, আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ, হকিস্টিক, বেতের লাঠি ও নগদ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও একটি মোবাইল ফোন ও কিছু প্রসাধনী সামগ্রীও জব্দ করা হয়েছে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন উদ্দিন জানান, এই চক্রটি একটি সুসংগঠিত ডাকাত দল। তারা মূলত বিমানবন্দর থেকে আসা প্রবাসীদের অনুসরণ করত। এরপর সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছালে, র্যাব পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে সবকিছু লুট করে নিত।
তিনি আরও জানান, গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি দুবাই ফেরত প্রবাসী ফারুক মিয়া যখন গভীর রাতে হাতিরপুল রোডে তার বাসার সামনে গাড়ি থামান, তখন এই চক্রটি তাকে ঘিরে ধরে। প্রথমে র্যাব পরিচয় দিয়ে ভয় দেখায় এবং এরপর জোরপূর্বক তাকে ও তার মালবাহী গাড়ি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে, মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং ফারুক মিয়াকে মারধর করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে অবশেষে হাতিরঝিল এলাকায় ফেলে রেখে যায়।
পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি-র তত্ত্বাবধানে নিউমার্কেট থানা পুলিশের একাধিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটি তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে এবং অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে পূর্বেও একাধিক মামলা রয়েছে। ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ৪টি, ফারুক বেপারীর বিরুদ্ধে ২টি, শহিদুল ইসলাম শেখের বিরুদ্ধে ৭টি, মানিকের বিরুদ্ধে ৯টি, জহিরুলের বিরুদ্ধে ১২টি, আল-আমিনের বিরুদ্ধে ৫টি এবং বারেকের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ, অস্ত্র আইন ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশের এই সফল অভিযানে র্যাব পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সংঘটিত হওয়া একটি বড় ধরনের অপরাধ চক্রের পর্দা উন্মোচিত হলো। প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
