আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ে স্বাগত জানালেন ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আহমেদ আল-খলিলী। সোমবার (১৬-আগস্ট) এক বিবৃতিতে তিনি আফগানিস্তানের বিজয়ে দেশটির জনগণকে স্বাগত জানান। ওমানের এক সূত্রে এই তথ্য জানাগেছে।
এদিকে, গতকাল (১৫-আগস্ট) কাবুলের ক্ষমতা তালেবানের হাতে চলে আসার আগেই আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী মুসলিম দেশ তাজিকিস্তানে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। কিন্তু তাকে দেশটিতে আশ্রয় না দেওয়াতে বিমান ঘুরিয়ে আশ্রয়ের জন্য যান আরেক মুসলিম দেশ ওমানে।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, ওমান সরকার আশরাফ গনিকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে কি না, তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। তবে সোমবার পর্যন্ত ওমানেই রয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থাগুলো জানিয়েছে, ওমানে আশ্রয় না পেলে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন আফগানিস্তানের পরাজিত এ প্রেসিডেন্ট। ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশটির নাগরিকত্বও ছিল গনির।
দীর্ঘ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন আশরাফ গনি। ২০১৪ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, সেই নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন তিনি। তবে তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাই শেষ পর্যন্ত গনি দেশটিতে আশ্রয় নিতে পারেন বলে জল্পনা চলছে।
ওমানে আশরাফ গনির সঙ্গে আফগানিস্তানের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামিদুল্লাহ মুহিবও রয়েছেন। তালিবানের সামনে কখনও মাথা নত করবেন না বলে বার্তা দিলেও, সদ্য সাবেক উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালেহ তাজিকিস্তানেই রয়েছেন।
এদিকে অ্যামেরিকা সেনা এবং আফগানিস্তানের অনেক রাজনীতিবিদ দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তালেবানের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করলেও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে তালেবান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা আদর্শ অনুসরণ করে মক্কা বিজয়ের মতোই আফগানিস্তান বিজয়ের পর সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যোদ্ধারা।
তবে অ্যামেরিকার গড়া পুতুল প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি তালেবানের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে গতকালই দেশটি ছেড়ে পালিয়ে যান প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে ঘানিকে আশ্রয় দেয়নি মুসলিম দেশটি। বিমানবন্দরে নামার আগেই তার বিমান ঘুরিয়ে দিয়েছে তাজিকিস্তান। ফলে আকাশেই মোড় নিয়ে ওমানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় আশরাফ ঘানিকে বহনকারী বিমান।
শেষমেশ ওমানের রাজধানী মাস্কাটে তিনি নেমেছেন বটে। তবে ওমান সরকার তাঁকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে কি না, এখনও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জানা যাচ্ছে এখনো তিনি ওমানেই রয়েছেন। একসময় আমেরিকার নাগরিকত্ব ছিল গনির। ওমান থেকে তিনি আমেরিকা রওনা দিতে পারেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ওমানে একা যাননি আশরাফ গনি। তাঁর সঙ্গে সেখানে আরও রয়েছেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামিদুল্লা মোহিব। তালেবানের সামনে কখনও মাথা নত করবেন না বলে অহংকার করা সদ্য প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লা সালেহ তাজিকিস্তানেই রয়েছেন।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এখনও দেশেই রয়েছেন। আফগানিস্তানে পূর্ণ এবং সার্বিক সরকার গঠনের জন্য তালিবানের সঙ্গে সমঝোতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একসময় দীর্ঘদিন আমেরিকার নাগরিক ছিলেন গনি। ২০১৪ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে সেই নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন তিনি।
আরো পড়ুনঃ
যে শর্তে এনওসি সুবিধা পাবেন ওমান প্রবাসীরা
করোনা রোগীকে স্পর্শ করলেই করোনা হয় না
যেভাবে সরকারি অনুদান পাবেন প্রবাসীরা
বিদেশে মারা গেলে ক্ষতিপূরণ আদায় করবেন যেভাবে
ওমান ও বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত করোনা ভ্যাকসিনের তালিকা
তবে তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান আমেরিকার নাগরিক। তাই শেষ পর্যন্ত গনি আমেরিকাতেই আশ্রয় নিতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তবে আশরাফ ঘানির এই অবস্থা ইরানের এক সময়কার শাসনকর্তা রেজা পাহলভীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। রেজা ছিলেন ইরানে অ্যামেরিকার তাবেদার শাসক।
তার বিরুদ্ধেই ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সঙ্ঘটিত হয়। ক্ষমতা হারিয়ে অ্যামেরিকার বন্ধু দেশ ছেড়ে পালান। কিন্তু অ্যামেরিকা তাকে জায়গা দেয়নি। অর্থাৎ প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় ছুঁড়ে ফেলে অ্যামেরিকা। ফলে আকাশেই ঘুরতে থাকে তার বিমান। কোনো দেশই তাকে আশ্রয় দিচ্ছিল না।
শেষমেশ মিশর অনুগ্রহ করে রেজা শাহকে আশ্রয় দেয়। এর কিছুদিন পর সেখানে নিঃসঙ্গ একাকী অবস্থায় জীবনলীলা সাঙ্গ হয় তার। নিজ জাতির সঙ্গে প্রতারণা করলে পরিণতি বুঝি এমনই হয়। যা পৃথিবীর অন্য আরও অনেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটেছে। এই পরিণতি বুঝি আশরাফ ঘানির জীবনেও ধেয়ে আসছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড ও তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে একটি মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ। এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাতে সোমবার (১৬ আগস্ট) বার্তাসংস্থা এপির বরাতে এসব জানিয়েছে বিবিসি। বৈঠকে মার্কিন নাগরিকদের কাবুল থেকে সরাতে তালেবান বাধা দেবে না এমন একটি চুক্তি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের দোহায় বৈঠকে মার্কিন জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি তালেবানদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। এখানে একটি ‘ডিকনফ্লিকশন মেকানিজম’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর অর্থ মার্কিন নাগরিকদের স্থানান্তরে তালেবান কোনো প্রকার বাধা দেবে না।
https://www.youtube.com/watch?v=FnVmRCc1U5g
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
