স্বজনের মুখ শেষবারের মতো দেখার জন্য ছুটে এসেছিলেন জার্মানি থেকে। কিন্তু বিমানের অব্যবস্থাপনা আর দায়িত্বহীনতার কারণে সেটি আর সম্ভব হলো না।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গাফিলতিতে ফ্লাইট মিস করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক রেজাউল করিম সিদ্দিকী নিশাদ।
বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বিকল্প ফ্লাইটে দেশে ফিরতে গিয়ে তিনি পৌঁছালেন ৪৮ ঘণ্টা পর—যখন তার স্বজনের দাফন সম্পন্ন হয়ে গেছে।
রেজাউল করিম সিদ্দিকী নিশাদ ১০ জানুয়ারি জার্মানি থেকে ঢাকা আসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার টিকিট আগেই কেনা ছিল, ফ্লাইট ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের (বিজি ৩২৮), যা আবুধাবি হয়ে ঢাকা পৌঁছানোর কথা। কিন্তু আবুধাবি বিমানবন্দরে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, বিমানের সার্ভারে তার নামে কোনো টিকিট নেই!
কাউন্টারে দাঁড়িয়ে অসহায়ের মতো তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, হাতে থাকা টিকিটের প্রমাণও দেখান। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেননি, বরং দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দায়িত্বহীনতার শিকার হয়ে রেজাউল করিম যখন বিমানের ওই ফ্লাইট মিস করেন, তখন বাংলাদেশে ফেরার একমাত্র উপায় ছিল নতুন করে টিকিট কেটে অন্য কোনো ফ্লাইটে আসা। রাতের বিমানবন্দরে অসহায়ের মতো ঘুরতে ঘুরতে শেষমেশ তিনি সিদ্ধান্ত নেন দুবাই গিয়ে ফ্লাইট ধরবেন।
দুবাই থেকে ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে অবশেষে দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু যখন তিনি নিজ বাড়ি টাঙ্গাইল পৌঁছান, তখন তার স্বজনের দাফন হয়ে গেছে!
পরবর্তীতে ঢাকায় বিমান বাংলাদেশের অফিসে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার টিকিট আসলে সার্ভারে ছিল! বিমানের কর্মীদের গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই তিনি ফ্লাইট মিস করেছেন।
রেজাউল করিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশ বিমানের অব্যবস্থাপনা আমাকে আমার ভাইয়ের শেষ বিদায়ে উপস্থিত হতে দিল না। এটা শুধু আমার নয়, প্রবাসে থাকা হাজারো মানুষের জন্য দুঃখজনক ও লজ্জার ঘটনা।”
তিনি এ ঘটনার তদন্ত ও জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি করেছেন, পাশাপাশি ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন।
ঢাকায় পৌঁছে বিমানবন্দর থেকে লাগেজ সংগ্রহ করতে গিয়ে নতুন এক বিপদের মুখে পড়েন রেজাউল করিম। দেখেন, তার লাগেজ কেটে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করা হয়েছে।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ চুরি ও মালামাল হারানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়, কিন্তু একের পর এক এমন ঘটনায় প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রেজাউল করিম আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি শেয়ার করলে অনেকেই সমবেদনা জানিয়েছেন এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
তবে এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই ধরনের দায়িত্বহীনতার শিকার যেন আর কেউ না হয়—এটাই রেজাউল করিমের একমাত্র দাবি। প্রবাসীদের কষ্টের অর্থে পরিচালিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান কেন এত অনিয়মের শিকার হবে? এই প্রশ্নের উত্তর কি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিতে পারবে?
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
