ইতিহাসের এক মহান বীর, হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি ইসলামের গৌরবময় যুদ্ধগাথার এক উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি ছিলেন ইসলামের প্রবল বিরোধী। কাফেরদের পক্ষে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে মুসলিম বাহিনীকে একাধিকবার পরাজয়ের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহর হেদায়েতের আলোয় আলোকিত হয়ে ইসলাম গ্রহণের পর, তিনি হয়ে ওঠেন মুসলিম বাহিনীর অপ্রতিরোধ্য সৈনিক ও সেনানায়ক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অদম্য বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাকে সাইফুল্লাহ বা “আল্লাহর তরবারি” উপাধি দিয়েছিলেন। মাত্র ১৪ বছরের ইসলামি জীবনে তিনি প্রায় ১৫০টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং একটিতেও পরাজিত হননি। তার অসামান্য কৌশল ও সাহসিকতা মুসলিম বাহিনীকে প্রতিটি যুদ্ধে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
খালিদ বিন ওয়ালিদের জন্ম ৫৯২ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের সম্মানিত বানু মাখজুম গোত্রে। তার পরিবার ছিল আরবের যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী। শৈশব থেকেই তিনি শক্তিশালী দেহগঠন, সাহস এবং যুদ্ধকৌশলে দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি উহুদের যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন এবং তার কৌশল মুসলিম বাহিনীর জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
ইসলাম গ্রহণের পর, খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামের পতাকা তলে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে ওঠেন। তার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী পারস্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মতো পরাক্রমশালী শক্তিকে পরাজিত করে। ইয়ারমুকের যুদ্ধ, যা মুসলমানদের জন্য এক ঐতিহাসিক বিজয়ের সন্ধিক্ষণ ছিল, তার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এই যুদ্ধ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সিরিয়া শাসনের অবসান ঘটায় এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি নিশ্চিত করে।
তার বীরত্বের আরেকটি উদাহরণ হলো মুতার যুদ্ধ, যেখানে তিনি এমনভাবে লড়াই করেন যে তার হাতে নয়টি তলোয়ার ভেঙে যায়। নিজেই বলেছিলেন, “মুতার যুদ্ধে আমার হাতে নয়টি তলোয়ার ভেঙেছে। পরবর্তীতে আমার একটি ইয়ামিনী তলোয়ার অবশিষ্ট ছিল।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর খালিদ বিন ওয়ালিদ খলিফা আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু’র অধীনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তার সাহসিকতায় ইসলামের সীমা বিস্তৃত হতে থাকে, পারস্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অনেক অঞ্চল ইসলামের অধীনে আসে।
৬৪২ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার হিমসে মৃত্যুবরণ করেন এই মহান বীর। মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন, “আমার শরীরে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে অস্ত্রের আঘাত নেই। কিন্তু আমি আজ সজ্জায় মৃত্যুবরণ করছি। এটি একজন সৈন্যের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তার স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে হিমসে তাকে সমাহিত করা হয়। তার কবরের পাশে নির্মিত হয় একটি মসজিদ, যা আজও তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় একজন বীর সেনাপতি হিসেবে, যিনি ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখতে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
