গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২৮ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে বলে সাম্প্রতিক শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিশাল অর্থ পাচার দেশের অর্থনীতি, বিশেষত ব্যাংক খাতকে ভঙ্গুর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংক দখল, ঋণ কেলেঙ্কারি এবং আর্থিক দুর্নীতির কারণে ডজনখানেক ব্যাংক এখন দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় পাচারকৃত অর্থের অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।
টাস্কফোর্সের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে:
পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদ চিহ্নিত করা।
বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ।
মামলার কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
দেশের আর্থিক খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই কাজে নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকলেও, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অর্থ পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ফলাফল দেখার ব্যাপারে আশাবাদী।
টাস্কফোর্সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ও সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা যুক্ত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলা এবং আর্থিক খাতের রাঘববোয়ালদের যোগসাজশে একটি অনৈতিক চক্র অর্থ পাচারের এই বিশাল চিত্র তৈরি করেছে। শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়, ঘুষ, দুর্নীতি, প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি, এবং বিদেশে সম্পদ ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে।
পাচারকৃত অর্থ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জমা হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই বাড়ি কেনা বা ব্যবসায় বিনিয়োগে ব্যবহার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হোসেন আরা শিখা জানান, প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টা চলছে।
সরকারের এমন উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই প্রচেষ্টার সফলতার জন্য টাস্কফোর্সের কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা প্রয়োজন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
