চাকরীর দাবীতে ওমানের সোহার ও সালালাহ অঞ্চলে বিক্ষোভ করেছে ওমানি নাগরিকরা। গত রবিবার (২৩ মে) সোহার ও সালালাহ অঞ্চলের শ্রম অফিসের সামনে এই বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সূত্র জানিয়েছে, করোনা মহামারিতে কাজ হারিয়ে একদল ওমানি নাগরিক শ্রম অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলেন। হঠাত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে কয়েকজন পুলিশকে লক্ষ করে পাথর নিক্ষেপ করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। এই সময় পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ‘‘দেশটির সরকারি ও সামরিক এজেন্সিগুলোতে শুন্যপদে চাকরি প্রদানের লক্ষ্যে সোহার ও সালালাহ শ্রম অফিসে সরকারের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। অধিবেশন চলাকালীন সকল ধরণের দাঙ্গা রোধে বিক্ষোভকারীদের ঘিরে ছিলেন রয়্যাল ওমান পুলিশ।” নাশকতার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে রয়্যাল ওমান পুলিশ। বর্তমানে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এনেছে আরওপি। এ ব্যাপারে কোনো ধরণের গুজবে কান না দিয়ে সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে আধুনিক প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, স্বনির্ভরতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যমে করোনা পরবর্তী ওমানে প্রবাসী ও ওমানি নাগরিকদের জন্য হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। করোনা ভাইরাস মহামারীতে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের উপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এই প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে দেশে করোনা পরবর্তী কাজের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা জরুরী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমাদের দক্ষতা উন্নয়ন দরকার। কারণ আগামী দিনে সাড়া বিশ্ব সাইবার নিরাপত্তা এবং অটোমেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা-ভিত্তিক পরিষেবাদি প্রদানের বেশি সুযোগ তৈরি হবে। তাই আমাদের কর্মক্ষেত্রে সঠিক দক্ষতা অর্জনের জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে।”
ওমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল কলেজের প্রশিক্ষণ জসীম আল বালুশি বলেন, ‘‘আগামী দিনে কর্মক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই কর্মক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, সচেতনতা প্রোগ্রাম, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
করোনা পরবর্তীতে দেশের উৎপাদন শিল্প বিশেষত খাদ্য, পানীয় এবং ওষুধের সাথে সম্পর্কিত খাতে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পণ্যগুলি যথাসময়ে কোথায় প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার জন্যও লজিস্টিক, পরিকল্পনাবিদ, গুদামজাত করণ এবং পরিবহণ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।”
আল বালুশি আরো বলেন, “করোনা পরবর্তীতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরির জন্য সরকারকে অবশ্যই দেশের আর্থিক, সামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক প্রভাবের দিকে নজর বাড়াতে হবে। এছাড়াও দেশে নতুন শ্রম বাজারের নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন পরিকল্পনা আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একইসাথে দেশে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা আরো উন্নত করতে হবে।”
ওমানের ব্যবসা ও অর্থনীতি অনুষদের প্রধান ডঃ হেশাম মাজেদ বলেন, ‘‘করোনা পরবর্তী দেশের সাতটি খাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো হলো: স্বাস্থ্যসেবা, আইটি খাত, ই-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা, এসএমই, কৃষি এবং পর্যটন। কর্মসংস্থানের এই ক্ষেত্রগুলোকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকারকে দৃঢ়তার সাথে কাজ করে যেতে হবে।”
উল্লেখ্য: ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় ওমানের বিভিন্ন জায়গায় হাজার-হাজার মানুষ ভালো মজুরির দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। সেইসময়ও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং তাজা গুলি ছুঁড়েছিল পুলিশ। তৎকালীন বিক্ষোভে দুজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। ২০১১ সালের পর ফের দেশটিতে চাকরীর দাবীতে এটিই প্রথম কোনো বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
