বয়স পঁয়ষট্টিরও বেশি ওমানপ্রবাসী সোলাইমান মিয়ার। শুধু কর্মক্ষম নয়, চলাফেরায় ও অনেকটা অক্ষম। তবুও তার বাড়ি ফেরা হচ্ছিল না শুধুমাত্র আউটপাশের কারণে। খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে দিনাতিপাত করছিলেন কর্মস্থল মাস্কাট সিটির মবেলা নামক স্থানে।
বাড়ি ফেরার ব্যাকুলতা কাজ করলেও সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ তার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। বিগত দশ বছর ধরে তিনি ভিসাহীনভাবে বসবাস করছিলেন। ওমানে কখন সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবে তার প্রতীক্ষায় দিন গুনছিলেন।
তার এই দুর্দশার খবর পৌঁছে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির সংবাদকর্মী মীর মাহফুজ আনামের কাছে। ওই সংবাদকর্মীকে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে দেশে ফেরার আকুতির কথা বর্ণনা করেন সোলাইমান মিয়া।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয় এই বৃদ্ধের আকুতির কথা। খবরটি পৌঁছে ওমানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে। মানবিক কারণ দেখিয়ে দূতাবাস থেকে ওমান সরকারের কাছে তাকে ফেরার আবেদন করা হলে তা গৃহীত হয়।
আরো পড়ুনঃ বিদেশগামীদের কোভিড টেস্ট এর নিয়মাবলী
দূতাবাসের আইন সহায়তাকারী মাসুদ করিম সবধরনের কাগজপত্র প্রস্তুত করে দিলেন। এবার প্রয়োজন ছিল একটি টিকিট। তাও ব্যবস্থা হলো সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে। চট্টগ্রামের ফ্লেমিংগো ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল নামক একটি প্রতিষ্ঠান তার জন্য একটি সৌজন্যে টিকিট পাঠান। আগামী ১৩ নভেম্বর রাতে বিমান বাংলাদেশে করে তার দেশে ফেরার দিন। আরও কিছু প্রবাসী তাকে পাঠাতে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
ওমানের সাদ্দাতের বেহেস্ত দেখতে এখানে ক্লিক করুনঃ
সোলাইমান মিয়া বেজায় খুশি হলেন। দিনক্ষণ গুনতে লাগলেন। ওমানে থাকা তার শ্যালক তাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন আমরাত নামক অপর একটি স্থানে। সেখান থেকে করোনা পরীক্ষা সেরে মূলত দেশে ফিরবেন।
দুর্ভাগ্য, দেশে ফেরার এক সপ্তাহ পূর্বে বৃহস্পতিবার সকালে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। পরে ওমান রয়েল পুলিশ এসে লাশ মর্গে নিয়ে যান। তার শ্যালক রুবেল জানিয়েছেন, লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ওমানের আউটপাশ আপডেট
ওমান প্রবাসীদের বহুল প্রত্যাশিত আউটপাশ বা সাধারণ ক্ষমার ব্যাপারে বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের আলোচনা শুনা গেলেও এ ব্যাপারে ওমান সরকারের পক্ষথেকে কোনো ধরনের আপডেট দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত ২০১৫ সালের ৩ মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে ওমান। তৎকালীন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সিকান্দার আলী থাকাকালীন এই আউটপাশের সুযোগ পায় ওমান প্রবাসীরা।
এই সাধারণ ক্ষমার সুযোগে একজন প্রবাসী কোনো জেল, জরিমানা ছাড়াই ওমান থেকে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন। দীর্ঘ ৫ বছর পর পুনরায় ওমানের আউটপাশ দিবে এমন গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। ওমানের পূর্বের হিসেব অনুযায়ী দেখা যায়, দেশটি প্রতি ৫ বছর পর পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। সেই হিসেবে বর্তমানে ৫ বছরের বেশি সময় যাবত ওমানের আউটপাশ বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে আউটপাশ ঘোষণা করছেনা ওমান সরকার এমন তথ্য পাওয়া গেছে বিশ্বস্ত সূত্রে।
আরও পড়ুনঃ ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা পাবেন ২০০ কোটি টাকার ঋণ
দেশটিতে যেয়ে নানা কারণে বসবাসের বৈধতা হারিয়ে চরম বিপাকে আছেন অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশী। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে চাকরি হারিয়ে দুমুঠো খাবার জুটছেনা এমন প্রবাসীর সংখ্যাও অনেক।
এর আগে ২০০৯-১০ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল দেশটি। তখন প্রায় ৬০ হাজার অবৈধ অভিবাসী এ সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন। চলতি বছর প্রায় পঞ্চাশ হাজারের অধিক বাংলাদেশী প্রবাসী আউটপাশের অপেক্ষায় আছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে।
চলতি মাসে ওমানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আউটপাশের ধারণা করছে অনেকেই। তবে এ ব্যাপারে ওমান সরকার থেকে তেমন কোনো তথ্য এখনো জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ গোলাম সারোয়ারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রবাস টাইমকে বলেন, “আউটপাশের ব্যাপারে ওমান সরকার থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অফিসিয়াল ঘোষণা আসেনি, এখনো ওমানের করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি খারাপ পর্যায়ে, আমরা আশাবাদী ওমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো ওমান সরকার আউটপাশ ঘোষণা করবেন।”
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রম বাজার ওমান
এদিকে ওমানের আউটপাশ নিয়ে ইতিমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অসাধু দালাল চক্র। অসহায় প্রবাসীদের আউটপাশ দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রবাসীদের থেকে এমন অভিযোগ ও আসছে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ওমানে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে সকল প্রবাসীরাই সুযোগ পাবেন। এতে অতিরিক্ত কোনো অর্থের প্রয়োজন হবেনা। সুতরাং না বুঝে আউটপাশের জন্য অর্থ লেনদেন করে প্রতারিত না হতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
সেইসাথে ওমানের আউটপাশ নিয়ে বিভিন্ন ভুঁইফোড় ইউটিউব চ্যানেল এবং অনলাইন পোর্টাল থেকেও নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এইসব গুজবে কান না দিতে প্রবাস টাইমের পক্ষথেকে সকলকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। ওমানের সকল খবরের জন্য দেশটির সরকার অনুমোদিত সংবাদ মাধ্যম অথবা বাংলাদেশের অফিসিয়াল সংবাদ মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে অনুরোধ জানানো হইলো।
আরো পড়ুনঃ মানব সেবার আড়ালে ওমানে কোটি টাকার জালিয়াতি
সাধারণত উপসাগরীয় দেশগুলো অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে কোনো জরিমানা ছাড়াই দেশ ত্যাগের অনুমতি দেয়। কিছুদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতও দেশটিতে থাকা অবৈধ শ্রমিকদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়। সাধারণ ক্ষমার অর্থ অবৈধ শ্রমিকেরা জেল এবং জরিমানা ছাড়াই দেশে ফিরতে পারবেন। কিন্তু বৈধ অভিবাসী হতে পারবেন না।
আরো পড়ুনঃ ওমানের রহস্যময় নগরী সাদ্দাতের বেহেস্ত
ওমানে বিদেশি শ্রমিকদের সংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, শ্রমিক পাঠানোর দিক থেকে ওমান বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক শ্রমবাজার। ওমানের জাতীয় পরিসংখ্যান কেন্দ্রের নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গেছে, এই বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ অবধি প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার প্রবাসী শ্রমিক ওমান ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিলো দুই লাখ ৬৩ হাজার ৩৯২ জন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
