চাঁপাই নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনের ওয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মার্কেট। পৌর এলাকার রাজারামপুরে মহাসড়কের পাশে সারিবদ্ধ সাইনবোর্ড দেখে বাইরে থেকে মনে হবে কম্পিউটার-ফটোকপির দোকান। এসব দোকানে কম্পিউটার-ফটোকপির পাশাপাশি ভেতরে প্রকাশ্যে চলছে পাসপোর্ট দালালদের কারবার। পাসপোর্ট অফিসের সামনে এসব দোকানঘর ঘিরেই তৎপর পাসপোর্ট দালাল চক্রের সদস্যরা। গতকাল সরজমিন ঘুরে বিভিন্ন সেবাগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে এমন এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, চাঁপাই নবাগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনে গড়ে ওঠা মার্কেটেই পাসপোর্ট দালালদের আনাগোনা।
দোকানের সামনে ফেস্টুনে লেখা- নতুন পাসপোর্ট প্রসেসিং ও নবায়নের কাজ করা হয়। এ পাসপোর্ট অফিসে ঢুকতে ডান পাশেও গড়ে উঠেছে মার্কেট। সেখানেও লেখা- এখানে ব্যাংক ড্রাফট ও পাসপোর্টের ফরম পূরণ করা হয়। পাসপোর্ট অফিসের সামনের মার্কেটে ছয়টি এবং ডান পাশের মার্কেটে দুই দোকানে পাসপোর্ট দালালির কারবার চলে।
সারাক্ষণ এখানে দালালদের প্রকাশ্য হাঁকডাক। বেশির ভাগ পাসপোর্ট প্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে দালালের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেয় দালালরা। পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অঙ্ক ভিন্ন। যেমন- সিরিয়াল ছাড়া আবেদন জমা করতে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পেতে ২ হাজার, নামের বানান এবং জন্ম তারিখ সংশোধনে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাই নবাবগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসকেন্দ্রিক দালালদের নিয়ন্ত্রণ করেন পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী মো. নাজমুল ইসলাম। কয়েকদিন থেকে এ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নেই। এ সুযোগে নাজমুলই সব নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা গেছে। পাসপোর্টের আবেদনপত্রের জন্মসনদ, বয়স বিভ্রান্তি, সত্যায়নে ভুল নির্ণয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে দালালচক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।
অফিসটিতে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা পাসপোর্টকারী সহযোগীদের ভেতরে ঢুকতে না দিলেও অনায়াসে যাতায়াত করছে দালালরা। আবেদনকারীদের কয়েকজনের অভিযোগ, দালালদের মাধ্যমে আবেদন করলে তারা আবেদনপত্রে একটি বিশেষ চিহ্ন দিয়ে দেন। এই চিহ্ন দেখলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মীরা বিনাবাক্য ব্যয়ে আবেদন গ্রহণ করে ফেলেন। আর এই বিশেষ চিহ্ন ছাড়া আবেদন করলে তারা আবেদন সহজে গ্রহণ করতে চান না। গতকাল পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও মো. হারুন রশিদ ও রবিউল ইসলাম তাদের পাসপোর্ট জমা দিতে পারেননি।
হতাশ হয়ে তারা বাড়ি ফিরে গেছেন। হারুন রশিদ মানবজমিনকে বলেন, আমি গ্রাম থেকে এসে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও আমার আবেদন ফরম জমা নেয়নি। আমার বিয়ের কাবিননামা কাগজ নিয়ে পরের দিন আসতে বলেছেন। আগামীকাল আবার যাবো জানি না আবার কি ভুল ধরে। রবিউল ইসলাম বলেন, আমার ভোটার আইডি কার্ড হয়নি। জন্মনিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন ফরম জমা দিতে গিয়েছিলাম। তাদের কথা মতো পাসপোর্ট অফিসের বাইরের কম্পিউটার দোকান থেকে জন্মনিবন্ধন সনদের সার্চ কপিও দিয়েছি।
তারপরও বাবার ভোটার আইডি কার্ডের মূল কপি লাগবে বলে আবেদন ফরম ফেরত দিয়েছেন। আবার কাল যাবো দেখি কি হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাই নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, এই পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমানের বদলি হয়েছে। গত রোববার তিনি ঢাকা চলে গেছেন। এখানে নতুন অফিসার আসবেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। দালালদের কোনো প্রশ্রয় নেই। তবে অভিযোগকারীদের অফিসে আসতে বলার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
সূত্র: মানবজমিন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
