শুধুমাত্র পরিবার প্রিয়জনকে একটু ভালো রাখার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান অনেকেই। দেশে কর্মসংস্থান না হওয়ায় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় বিদেশ যেয়ে কেউ লাশ হয়ে ফিরতে চান না। অথচ ভাগ্যের নির্মমতায় মাঝ পথেই থমকে যায় অনেকের জীবন। সরকারি হিসাবে গত ৩০ বছরে বিদেশে ৪৬ হাজার ৫০৩ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ বছরের প্রথম ১১ মাসে অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ২২২ জনের লাশ এসেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪২২ জনের বয়স ১৯ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এর কারণ হিসেবে প্রতিকূল পরিবেশ, অমানুষিক পরিশ্রম, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কথা বলা হয়েছে। প্রবাসে অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার এসব শ্রমিকের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ।
বিদেশে যত কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ২০ দশমিক ১২ শতাংশের প্রাণ গেছে অপঘাতে। যেসব মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলা হচ্ছে, সেগুলোও সন্দেহমুক্ত নয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নিজেকে নীরোগ প্রমাণ করে বিদেশ যাওয়া তরুণ কর্মীরা কেন হৃদরোগ বা অসুখে মারা যাচ্ছেন, তা এক বড় প্রশ্ন। অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতিতে দেশে গড় আয়ু ৭৩ বছর ছুঁই ছুঁই হলেও মারা যাওয়া প্রবাসী কর্মীরা আয়ু পেয়েছেন গড়ে মাত্র ৪১ দশমিক ৫৪ বছর! অপমৃত্যুর শিকার কর্মীদের গড় আয়ু আরও কম। মাত্র ৩২ দশমিক ২৩ বছর।
দেশের অর্থনীতিকে পুষ্ট করা রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে সরকার প্রণোদনাসহ নানা উদ্যোগ নিলেও প্রবাসী কর্মীরা ভালো নেই। একজন কর্মী বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সুস্থ, সবল ও নীরোগ প্রমাণিত হয়েই বিদেশ যান। অথচ এমন তরতাজা মানুষই অকালে মারা যাচ্ছেন বিদেশে। দেশের অর্থনীতি সচল রাখা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের এমন মৃততে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন রয়েছে অনেক। তাদের মতে, দিনে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয় অনেক প্রবাসীকে। কর্মক্লান্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। চিকিৎসা পান না। কর্মীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হন। সুষম খাবার পান না। কর্মীরা চার-পাঁচ গুণ বেশি টাকা খরচ করে বিদেশ যান। অনেকেই চড়া সুদে ঋণ করেন এবং জমি বিক্রি করে বিদেশ যান। সেখানে গিয়ে প্রতারিত হয়ে চাকরি ও বেতন পান না। সবসময় চাপে ও দুশ্চিন্তায় থাকেন। যেভাবেই হোক, বিদেশে কর্মী পাঠাতে হবে- এ নীতির কারণে স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ ও পরিমিত শ্রমের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
প্রবাসীদের অস্বাভাবিক মৃত্যু তদন্তে সরকারের তরফ থেকেও কোনো উদ্যোগ নেই। বছরের পর বছর অস্বাভাবিক মৃত্যু বাড়তে থাকলেও তা প্রতিরোধে সক্রিয় হচ্ছে না সরকার। দেশের অর্থনীতি সচল রাখা রেমিট্যান্সের কথা ভেবে হলেও প্রবাসীদের আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের এমন বক্তব্য অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের। দায়সারাভাবে তাঁদের পরিবারকে মৃত্যুর কারণ বলে দেওয়াটা খুব অসম্মানজনক। মৃত্যুর কারণ অবশ্যই সরকারিভাবে যাচাই করা এবং তা প্রতিরোধে উদ্যোগী হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
