আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও বলেছে, কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজনের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে কমপক্ষে ৫০ জন নির্মাণ শ্রমিক নিহত এবং পাঁচশো জন গুরুতর আহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের শ্রমিক। গত বছর কাতারে শ্রমিকের হতাহতের ঘটনার এই তথ্য আইএলও প্রকাশ করেছে শুক্রবার।
ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্তও করা হয়নি বলে আইএলও উল্লেখ করেছে। আইএলও কাতারে হাজার হাজার বিদেশি শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে কোন অভিযোগ এলেই কাতার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তা সমাধানের চেষ্টা করেছে।
এদিকে বাংলাদেশের একজন ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জালাল বলেন, তিনি বলেন যারা কাজ করতে যায়, তাদের নির্মাণ কাজ সম্পর্কে আগের অভিজ্ঞতা থাকে না। সে বিষয়টিই বড় ঝুঁকি তৈরি করে বলে তিনি মনে করেন “শুধু বিশ্বকাপের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজেই দুর্ঘটনা ঘটে-তা ঠিক নয়। এখানে স্বাভাবিক নির্মাণ কাজেও দুর্ঘটনা ঘটে বলেন জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, “কাতারে নির্মাণ কাজে শ্রমিকের নিরাপত্তায় যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে বাঙালীদের একটা গাফিলতি সব ব্যাপারেই থাকে। তাদের গাফিলতি থাকলেও কাতার কর্তৃপক্ষ এখানে স্টেডিয়াম বা অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কাজ করেন সুমাইয়া ইসলাম। তিনি বলেন, বছর দেড়েক আগে কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিক কাতারে নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে আহত হয়ে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু কাতার কর্তৃপক্ষ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ তারা পাননি।
কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের যে কাজ হয়েছে, তাতে কাজের হেজারড বা নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক ইনজুরড হয়েছে। কিন্তু অঙ্গহানিসহ ইনজুরড হলে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে আইএলও’র যে বিধান আছে, সে অনুযায়ী তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি” বলেন সুমাইয়া ইসলাম।
গত বছর কাতারে নির্মাণ কাজে বিদেশি শ্রমিকের আহত এবং নিহত হওয়ার যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের শ্রমিক কতজন ছিল-তার কোন পরিসংখ্যান বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলে জানান আইএলও।
কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম বিষয়ক কনস্যুলার ড: মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, কাতারে কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমিকের কোন সমস্যা হলে তা তারা সাথে সাথে কাতার কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, তারা কোন সমস্যা বা অভিযোগ তুলে ধরলে কাতার কর্তৃপক্ষ তাতে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে বলা হচ্ছে, চার লাখের বেশি বাংলাদেশের নাগরিক কাতারে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন।
এদিকে গার্ডিয়ানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মারা যাওয়া শ্রমিকদের ৬৯ শতাংশকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয়েছে। পৃথকভাবে ভারতের শ্রমিকদের বেলায় এই হার ৮০ শতাংশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাশের ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয় না। এর ফলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অজানাই থেকে যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
