পবিত্র রমজান মাস ঘিরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে বাংলাদেশি পোশাক, মুখরোচক খাবার এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী সামগ্রীর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে সেমাই, সুগন্ধি পোলাওয়ের চাল, খাঁটি গুড়, বিভিন্ন প্রকার মশলা, হালিমের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ এবং নজরকাড়া বাংলাদেশি পোশাকের বাজার এখন বেশ সরগরম। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজান মাস এবং আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বহুগুণ বেড়ে গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় দশ লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। রমজান মাসে তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের চিরায়ত খাবার ও পোশাকের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। এই গভীর আগ্রহ স্থানীয় বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
দুবাইয়ের বিভিন্ন বাংলাদেশি সুপারমার্কেট এবং গ্রোসারি দোকানগুলোতে ইফতার ও সেহরির জন্য বাংলাদেশি খাবারের প্রতি প্রবাসীদের প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশ সুপার মার্কেটের স্বত্বাধিকারী রাশেদুল ইসলাম জানান, “রমজান মাস শুরু হলেই আমাদের দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে চিঁড়া, মুড়ি, গুড়, সুস্বাদু সেমাই, খেজুর এবং তরল দুধের বিক্রি এই সময়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়।”
শারজাহ এলাকার একজন সফল হোটেল ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, “রমজান মাসে দুবাইয়ে বাংলাদেশি খাবারের প্রতি প্রবাসীদের যে বিপুল আগ্রহ, তা বিবেচনা করে আমি একটি বিশেষ ইফতার মেনু চালু করেছি।” তার হোটেলে প্রতিদিন ইফতারের মেনুতে থাকে মুখরোচক বেগুনি, পেঁয়াজু, পুষ্টিকর হালিম, মিষ্টি জিলাপি, সুস্বাদু খিচুড়ি, গরুর মাংস এবং বিভিন্ন প্রকার ভর্তার আকর্ষণীয় আয়োজন।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ইফতারের পদগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অনেক প্রবাসী নিয়মিতভাবে অর্ডার করেন, বিশেষত যারা ব্যাচেলর, তারা প্রায় প্রতিদিনই এখানে আসেন।”
রমজান মাস শেষ হওয়ার আগেই দুবাইয়ের বাজারে ঈদ কেনাকাটার ধুম লেগেছে। বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা আকর্ষণীয় পাঞ্জাবি, ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, আরামদায়ক সালোয়ার-কামিজ, ফ্যাশনেবল ফতুয়া এবং শিশুদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
দুবাইয়ের একটি বাংলাদেশি পোশাকের দোকানের স্বত্বাধিকারী ফজলুর রহমান জানান, “ঈদকে সামনে রেখে আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রচুর নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি এবং শাড়ি আমদানি করেছি। অনেক ক্রেতা ইতিমধ্যেই তাদের পছন্দের পোশাকের জন্য অগ্রিম ফরমায়েশ দিয়ে রেখেছেন।”
ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত আশাবাদী এবং বলছেন, “এবারের বাজার বেশ ভালো যাচ্ছে। বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, কারণ এই পোশাকগুলো একদিকে যেমন মানসম্মত, তেমনি অন্যদিকে সাশ্রয়ীও বটে। রমজান মাস আমাদের জন্য ব্যবসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।” তবে, তারা পণ্য আমদানির খরচ এবং দোকানের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন বলেও জানান।
দুবাইসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসকারী প্রায় দশ লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসী রমজান মাসে তাদের দেশের খাবার ও পোশাকের প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী হওয়ায় এই বাজার সর্বদা গতিশীল থাকে। ব্যবসায়ীরা যেমন কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন, তেমনি প্রবাসীরাও তাদের ঐতিহ্যবাহী স্বাদ ও সংস্কৃতির স্পর্শ পেয়ে আনন্দিত। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, দুবাইয়ের এই বাংলাদেশি পণ্যের বাজার ততই আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
