মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছিল সৌদি আরব। তবে, গত কয়েক মাস ধরে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর সংখ্যায় আকস্মিক ও উদ্বেগজনক ভাটা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র (ডিমান্ড লেটার) সত্যায়নের জটিলতার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে প্রায় প্রতি মাসেই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮০ হাজারের বেশি কর্মী সৌদি আরবে গেছেন।
তবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে এই সংখ্যা হঠাৎ করেই প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, নতুন নিয়ম-কানুনের কারণে কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়ন করতে গিয়ে নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যার ফলে কর্মী পাঠানো ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যেখানে ৪৪ হাজার ২ জন কর্মী সৌদি আরবে গিয়েছিলেন, সেখানে অক্টোবর মাস থেকে এই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর – এই তিন মাসে কর্মী প্রেরণের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৮৩ হাজার ৫৮২ জন, প্রায় একইরকম এবং সামান্য কমবেশী।
কিন্তু, চলতি বছরের শুরু থেকেই এই চিত্রে পরিবর্তন আসে। জানুয়ারী মাসে কর্মী সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৬১৮ জনে, এবং ফেব্রুয়ারীতে তা আরও কমে ৪৪ হাজার ২৫৮ জনে পৌঁছেছে। এই আকস্মিক পতন রিক্রুটিং এজেন্সি এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় উভয়কেই চিন্তিত করে তুলেছে।
সৌদি শ্রমবাজারের এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি আলোচনার জন্য মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)-এর সদস্যবৃন্দ। বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণের জন্য বুধবার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে উপদেষ্টা আলোচনা করবেন।
বায়রা সদস্যরা বৈঠকে তাঁদের উদ্বেগের কথা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নতুন যে নিয়ম চালু হয়েছে, তা যদি অব্যাহত থাকে, তবে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো আরও অনেক কমে যাবে।
কারণ, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যত কর্মী যান, তাদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই ছোট ছোট চাহিদাপত্রের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।
গত বছরের ২২শে ডিসেম্বর থেকে সরকার এই ছোট আকারের চাহিদাপত্রগুলোর সত্যায়নের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম কার্যকর করেছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, দূতাবাসের সত্যায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে এখন ভিসার জন্য আবেদন করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, সৌদি শ্রমবাজারের জটিলতা দ্রুত নিরসন করা না গেলে, বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং রেমিটেন্স প্রবাহে বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
