বিশ্বজুড়ে আর্থিক গোপনীয়তার প্রতীক হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংক ফের একবার খবরের শিরোনামে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ‘সুইস সিক্রেটস‘ শীর্ষক নথিতে দেখা গেছে, এই ব্যাংকে আটটি প্রভাবশালী বাংলাদেশি পরিবারের ২৬১.৯ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ, অর্থাৎ প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকার বিশাল সাম্রাজ্য গোপনভাবে জমা রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের হাতে আসতেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই আটটি বাংলাদেশি পরিবারের ৬৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করা হয়। কিছু অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেলেও, বেশিরভাগ অ্যাকাউন্টেই নিয়মিত লেনদেন চলেছে, যা এই পরিবারগুলোর আর্থিক প্রতাপের সাক্ষ্য বহন করে।
আলোচিত পরিবারগুলো এবং তাদের আর্থিক সাম্রাজ্য:
১. সামদানি পরিবার: এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সামদানি পরিবার। মূল্যবান শিল্পকর্ম সরবরাহকারী গোল্ডেন হারভেস্ট গ্রুপের মালিক রাজীব সামদানি এবং তার পরিবারের সদস্য – স্ত্রী নাদিয়া সামদানি, ভাই মেহেদী সামদানি ও কোম্পানির পরিচালক মহিয়াস সামাদ চৌধুরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের সম্মিলিতভাবে সুইস ব্যাংকে প্রায় ৭৫৭ কোটি ৯২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫ টাকা জমা রয়েছে।
২. আজিজ মোহাম্মদ ভাই পরিবার: বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারও সুইস ব্যাংকে গোপন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তাদের ১২টি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৭২০ কোটি ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৫ টাকার বিশাল তহবিল গচ্ছিত আছে। এর মধ্যে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ছোট বোন নূরজাহান হুদা এবং বোন জামাই হুদা এল ইদ্রোসের অ্যাকাউন্টও রয়েছে।
৩. মিরালী গ্রুপ: এই গ্রুপের সদস্য মুবারক আলী, সোকিনা নাসরুল্লাহ মিরালী এবং সামাদ নাসরুল্লাহ মিরালীর সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৫৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ১০০ টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
৪. হিসামুদ্দিন সালেহ পরিবার: হিসামুদ্দিন সালেহ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১৮টি অ্যাকাউন্টে ৬৮০ কোটি ১৪ লাখ ১১ হাজার ৯১৫ টাকা জমা আছে। সালেহ পরিবারের অ্যাকাউন্টগুলোতে কোটি কোটি টাকার নিয়মিত লেনদেন আর্থিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও, রহিমা ফুড কর্পোরেশন, সিটি সুগার গ্রুপ, সানমার প্রপার্টিজ, সিলেটের সাবেক এক এমপির পরিবার এবং আরো কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পরিবারের নাম এই তালিকায় উঠে এসেছে।
সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তার সংস্কৃতি:
প্রায় ৩০০ বছর ধরে সুইস ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিখ্যাত। এই কঠোর গোপনীয়তার কারণেই বিশ্বজুড়ে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সুইস ব্যাংককে তাদের অর্থ নিরাপদে রাখার জন্য বেছে নেয়। তবে, এই গোপনীয়তা একই সাথে বিভিন্ন অবৈধ আর্থিক লেনদেন এবং কর ফাঁকির মতো কর্মকাণ্ডকেও উৎসাহিত করতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রশ্ন এবং সরকারের পদক্ষেপ:
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি পরিবারগুলোর এই বিশাল অঙ্কের অর্থ জমা রাখার বিষয়টি এখন জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই অর্থের উৎস কী, এবং কেন এই পরিবারগুলো দেশের বাইরে টাকা জমা রাখলেন – এমন প্রশ্নগুলো এখন ঘুরে ফিরছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত, দ্রুত এই বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করা। যদি এই অর্থের উৎস বৈধ না হয়, তবে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একই সাথে, দেশের বাইরে অবৈধভাবে অর্থ পাচার রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
