মহামারী করোনা নিয়ন্ত্রণে আজ (১৬-জুলাই) থেকে শুরু হওয়া ওমানের কঠোর লকডাউনের সময়সীমা পরিবর্তন করলো ওমান সুপ্রিম কমিটি। শুক্রবার (১৬-জুলাই) ওমান সুপ্রিম কমিটির এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পূর্ব ঘোষিত লকডাউনের সময়সীমা ২০ থেকে ২২ জুলাইর পরিবর্তে ২০ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই ভোর ৪টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে লকডাউনের সময়সীমা বিকেল ৫ টা থেকে ভোর ৪ টা অবধি চলবে এবং ঈদ-উল আযহার ৪ দিন অর্থাৎ ২০ থেকে ২৪ জুলাই ভোর ৪টা পর্যন্ত গোটা ওমান পুরোপুরি লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। এই সময় দোকানপাট, শপিংমলসহ সকল ধরনের যানবাহন চলাচল এবং মানুষের চলাচল সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ওমান সুপ্রিম কমিটির নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এই সময়ে কোনো ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাহিরে বের হলেই মোটা অংকের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। তবে জরুরী প্রয়োজনীয় কিছু যানবাহন এই লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। যার মধ্যে রয়েছেঃ-
আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রি, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), সিটি করপোরেশন/পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি. অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
২. সব সরকারি, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসসমূহ বন্ধ থাকবে।
৩. সড়ক ও নৌ-পথে গণপরিবহন ও সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
৪. শপিংমল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৫. সব পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৬. সব ধরনের শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে।
৭. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক [বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি], রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৮. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/ নৌযান/পণ্যবাহী ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
৯. বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
১০. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত যেমন, ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি ব্যতীত কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরওপি আরো জানিয়েছে, ‘‘আসন্ন ঈদ-উল আযহায় সকল ধরনের জনসমাগম ঠেকাতে দেশের সকল প্রদেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। করোনা মোকাবেলায় আসন্ন ঈদে ওমানের সকল নাগরিক এবং প্রবাসীদের সুপ্রিম কমিটির দেওয়া সকল নির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছে ওমান পুলিশ।
এদিকে ধোফার অঞ্চলে খারিফ মৌসুম উপলক্ষে আগত দর্শনার্থীদের ভ্রমণের ঝামেলা এড়াতে ভ্যাকসিন নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। ওমান সরকার অনুমোদিত ভ্যাকসিনের কমপক্ষে একটি ডোজ প্রাপ্ত নাগরিক এবং প্রবাসীরা ধোফার প্রদেশে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। এছাড়াও ওমানের বাহির থেকে আগত পর্যটকদের ধোফারে প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই করোনা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আরো পড়ুনঃ
- ওমানের অধিকাংশ প্রদেশে করোনায় মৃত শূন্যের কোঠায়
- ওমান ও বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত করোনা ভ্যাকসিনের তালিকা
- ভিসা নিয়ে সুখবর দিলো ওমান শ্রম মন্ত্রণালয়
এ ছাড়াও ওমানে লকডাউন চলাকালীন রক্তদানকারী ব্যক্তিদের চলাচলে বিশেষ অনুমতি প্রদান করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেশের বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক পরিষেবা বিভাগ একটি পাস প্রদানের মাধ্যমে রক্তদানকারী ব্যক্তিরা সহজেই রক্ত দিতে চলাচল করতে পারবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, ‘‘লকডাউন চলাকালীন রক্তদানকারী ব্যক্তিদের অভাবে বিভিন্ন সময় নানান জটিলতা দেখা দিচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। তাই রক্তের প্রয়োজন মেটাতে ও নানান জটিলতা সমাধানে নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। জরুরি প্রয়োজন রক্তদাতাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্লাড ব্যাঙ্কে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রক্ত দেওয়ার জন্য রক্তদানকারীদের অবশ্যই দুই দিন আগে ব্লাড ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। যারা রক্ত দিবেন তারা ব্লাড ব্যাংকের পাস নেওয়ার জন্য ৯৪৫৫৫৬৪৮ নাম্বারে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠাতে হবে। এরপর বার্তা পাঠানো সেই নাম্বারে মুভমেন্ট পাস পাঠাবে ব্লাড ব্যাংক। ব্লাড ব্যাংকের পাঠানো এই পাস টি অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যবহার করতে পারবেন রক্তদানকারীরা।
একইসাথে ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির রয়্যাল ওমান পুলিশ (আরওপি)। লকডাউন চলাকালীন সময়ে ফ্লাইটের যাত্রীদের চলাচলের জন্য অবশ্যই ভ্রমণের নথি সাথে রাখতে হবে। এছাড়াও নিম্নে উল্লেখিত শর্তাদির অধীনে বিমানবন্দরে পিসিআর পরীক্ষার সুবিধা চালু থাকবে:
১, ফ্লাইটের যাত্রীদের প্রয়োজনীয় ভ্রমণের ডকুমেন্টস সাথে রাখতে হবে।
২, এয়ারপোর্টে যাওয়ার পূর্বে ভ্রমণকারীদের রয়্যাল ওমান পুলিশের ১০৯৯ নাম্বারে কল করে অনুমোদন নিতে হবে।
৩, ভ্রমণকারীদের অবশ্যই সুপ্রিম কমিটির সকল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
