হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বরত ৯ শতাধিক আর্মড পুলিশ সদস্যের নিরাপত্তা পাশ এখনো দেয়নি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। বর্তমানে যে নিরাপত্তা পাশ রয়েছে এপিবিএন সদস্যদের নিকট তা ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে এপিবিএন সদস্যদের এয়ারসাইটে (বিমানবন্দরের ভেতরে) দায়িত্বের বিষয়েও এখনো কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি বেবিচক। নিরাপত্তা পাশ না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখনো নতুন পাশ ইস্যু করা হয়নি। এটা বেবিচকের বিষয়।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী পাস ইস্যু করা হবে। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ নভেম্বর বেবিচকের পাস স্থগিতের সার্কুলার জারি করে বেবিচক। বেবিচকের সদস্য (সিকিউরিটি) এয়ার কমোডর মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান খানের স্বাক্ষরিত ওই সার্কুলারে বলা হয়, বেবিচকের বিমানবন্দর পাস নীতিমালা-২০২০ অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর থেকে আগের ইস্যু করা পাসগুলো স্থগিত ঘোষণা করা হলো।
এতে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রিত টার্মিনাল, এয়ারসাইডে প্রবেশ ও দায়িত্ব পালনের জন্য ৩০ নভেম্বর থেকে বৈধ এভসেক আইডি সংবলিত পাস থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে এভসেক আইডি নিতে বলা হচ্ছে। নতুন এভসেক আইডি সংবলিত পাস ছাড়া অন্য কোনো পাস নিয়ে বিমানবন্দরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের কর্মী ও অন্য সংশ্লিষ্টরা (এয়ারলাইনসসহ অন্যান্য) নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে এভসেক আইডির জন্য আবেদন করতে পারবে। এ ছাড়া এভসেক আইডি সংবলিত পাস ইস্যুর ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া নিয়ে এভসেক অফিসারদের প্রশিক্ষণ (যদি প্রয়োজন হয়) দিতে বলা হয়েছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে (এয়ারসাইট) দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বেবিচক সদরদপ্তরে চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বেবিচকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এপিবিএনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক এয়ারসাইটে এপিবিএন সদস্যদের মোতায়েনের একটি পরিকল্পনা চাওয়া হয়। এপিবিএনের পক্ষ থেকে সেই পরিকল্পনা চেয়ারম্যানের নিকট দেয়া হলেও সেটিরও মাস পেরুলেও কোন কার্যকারিতা নেই।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ সূত্র জানায়, এপিবিএন সদস্যদের জন্য পাসের বিষয়ে লিখিত আকারে বলা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি বেবিচক। এর প্রেক্ষিতে এসব ঘটনা উল্লেখ করে অতি সম্প্রতি বেবিচককে চিঠি দিয়েছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২০১০ সাল হতে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর সার্বিক নিরাপত্তা দায়িত্বের পাশাপাশি ভিআইপি ও ভিভিআইপি প্ররক্ষা, ভিভিআইপি বিমান প্ররক্ষা, বিভিন্ন কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বও পালন করে আসছে।
অতি সম্প্রতি এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ কারবারীদের আটক, ছিনতাইরত অবস্থায় ছিনতাইকারী চক্র এবং মানবপাচারকারী দুই জন চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। এতে প্রতীয়মান যে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে নানাবিধ অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে, যা প্রতিরোধকল্পে ও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের কার্যক্রম ও গোয়েন্দা নজরদারি অতীব জরুরী। গত ১১ নভেম্বর বেবিচক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্মিনাল ভবনের ভিতরে প্রতি শিফটে এপিবিএন সদস্যদের মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার এক মাস পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল ইসলাম বলেন, এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা আবশ্যক। আমি মনে করি বেবিচক এপিবিএন বসে তাদের নিজেদের মধ্যে বসে কোন বিষয়ে সমস্যা থাকলে সেটি ঠিক করে নেবে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ে এ ধরনের মনমালিন্য কোন ঝুঁকি না বাড়ে সেদিকে উভয়পক্ষের নজর থাকা উচিৎ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
